সুপ্রভাত ডেস্ক »
চার দিনের ব্যবধানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের আরেকটি তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় সাগরে ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ নামের জাহাজে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজনের প্রাণহানি হয়েছে। প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (৫ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। উপদেষ্টা সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আটকে পড়া নাবিকদের উদ্ধার ও আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং রাতভর দুর্ঘটনা পরবর্তী কার্যক্রম মনিটর করেন।
গতরাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে পতেঙ্গার অদূরে বহির্নোঙরে অবস্থান করা বাংলার সৌরভে আগুন লাগে। জাহাজটি আজ সকালে তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের গুপ্তাখালস্থ ডলফিন জেটি -৭ এ ভিড়বার কথা ছিল। জাহাজটি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) তেল পরিবহনের ট্যাংকার। এসময় ৪৭ জন ক্রু-কে জীবিত উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারী দল। তবে আতঙ্কে সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়া আহত অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ব্যক্তির নাম সাদেক মিয়া (৬০)। তিনি ওই জাহাজের জেনারেল স্টুয়ার্ট। তার বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানায়।
এক শোকবার্তায় উপদেষ্টা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানান। শোকাহত পরিবারের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
উপদেষ্টা আকস্মিক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানপূর্বক সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এদিকে শনিবার(৫ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক। তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে এই নাশকতা চালানো হয়েছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, বাংলার জ্যোতিতে আগুন লাগার পর নাশকতার কথা মাথায় রেখেই তদন্তকারীরা অগ্রসর হচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাংলার সৌরভে ফায়ার ড্রিল করা হয়। এই জাহাজটিতে কোনো মেরামতের কাজও চলছিল না।
তিনি জানান, গতরাতে হঠাৎ জাহাজের সামনের দিকে প্রায় একই সঙ্গে চারটি জায়গায় স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ক্রুরা। সেসময় জাহাজের কাছ থেকে একটি স্পিডবোট সরে যেতে দেখা যায় বলেও জানান তারা। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য এই নাশকতা হতে পারে।
অবশ্য বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির কাছে ৯৬ টি স্যালো এবং কোস্টার ট্যামকার থাকায় জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ে সমস্যা হবে না। তবে নাশকতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে বলেও শংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানায় ‘বাংলার জ্যোতি’ ও ‘বাংলার সৌরভ’ নামে তেলবাহী দুটি জাহাজ রয়েছে। এগুলো সাগরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজ থেকে তেল নিয়ে বন্দরে পৌঁছানোর কাজ করে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১১টার দিকে বন্দরের ডলফিন জেটিতে ‘বাংলার জ্যোতি’-তে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। এ ঘটনায় তিন জন মারা যান।