বাংলাদেশের আমের অর্থনীতি ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ, দেশে উৎপাদিত অন্য ফলমূলের তুলনায় আমের বাজার ব্যবস্থাপনা, কৃষিসেবা ও পরিবহনব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।
স্থায়ী বাগানে উৎপাদিত ফলের মধ্যে আম এখন সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে এর পরিমাণ ২৪ লাখ টনের মতো।
আমের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম। বিপরীতে দাম ভালো পাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, এ বছর এক কেজি আম উৎপাদনে গড়ে ব্যয় ২০ টাকা। বিপরীতে পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি আম মান ভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। কোনো কোনো বাগানমালিক সরাসরি খুচরা বিক্রেতার কাছে আম বিক্রি করেন। তাঁরা দাম পান আরও বেশি।
একবার আমগাছ পরিণত হলে ৫০ থেকে ৬০ বছর ফল পাওয়া যায়। ফলে শুরুতে বেশি বিনিয়োগ দরকার হলেও পরে ব্যয় কমে যায়। এতে অনেকেই আমের বাগান করতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
আমের জাতের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল হিমসাগর, ল্যাংড়া ও ফজলি। আর ভালো জাতের আমের এলাকা বলতে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বোঝাত। এখন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়ে বেশি আম হয় নওগাঁয়। আর সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত জাত আম্রপালি।
সাতক্ষীরা, রংপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন বিপুল পরিমাণে আম উৎপাদিত হচ্ছে। বাগানমালিকেরা এখন জনপ্রিয় জাতগুলোর পাশাপাশি নতুন বিভিন্ন জাতের আমের বাগান করছেন। উৎপাদন এলাকার সম্প্রসারণ ও নতুন নতুন জাত আসায় এখন আমের মৌসুমও বিস্তৃত হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও এর সামান্যই রপ্তানি হয়। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ ৭ম অবস্থানে থাকলেও রপ্তানিতে শীর্ষ দেশের মধ্যে নেই। মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আম পচেও যায়। দেশে যেভাবে আমবাগান বাড়ছে, তাতে রপ্তানি বাজার ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বাজারবিশেষজ্ঞরা। তবে এ ক্ষেত্রে উত্তম কৃষিচর্চা বা গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (গ্যাস) অনুসরণ করা দরকার।
বাংলাদেশ আম রপ্তানিতে শীর্ষে যেতে চায়। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশে এই প্রথম রপ্তানিবাজার লক্ষ্য রেখে আম উৎপাদনের জন্য উদ্যোক্তাদের সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্পের লক্ষ্য, প্রাথমিকভাবে ৯৩০ উদ্যোক্তাকে বেছে নেওয়া হলেও আগামী চার বছরের মধ্যে সংখ্যাটি ৮ হাজার ৪০০ জনে উন্নীত করা হবে। তাদের উৎপাদিত আম বিশ্বের ২৮টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এর বাইরে নানা উদ্যোগে মান অনুসরণ করে আম রপ্তানি হয়ে থাকে। এমনকি ইউরোপের মূলধারার চেইন শপেও পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের আম। এবছর আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার টন, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। বর্তমানে সাতটি জাতের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। সেগুলো হলো গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালি ও সুরমা।
আম রপ্তানির জন্য উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা (জিএপি) সার্টিফায়েড আম বাগান না থাকার কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে সার্টিফায়েড আম বাগান তৈরীতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। দুয়েক বছরের ব্যবধানে এটি করা সম্ভব হবে। তখন আম রপ্তানির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত আম এখনো রপ্তানির প্রক্রিয়ায় আসেনি। বানানা ম্যাংগো জাতের আম রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। সেটি সম্ভব হলে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানি আরো বেড়ে যাবে।