সুপ্রভাত ডেস্ক »
পর্যটকদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলের বেশ সুখ্যাতি আছে। শনিবার দুপুরে সেখানেই ছিলেন ঢাকাই ছবির নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম। তবে ঘুরতে নয়, মিমের পুরুলিয়া গমনের হেতু শুটিং। টালীগঞ্জের সিনেমা ‘মানুষ’-এর শুটিং করছেন তিনি। ফোন ধরেই মিম বললেন, ‘উঁচু পাহাড়ে আছি। চারপাশে সবুজ আর সবুজ। ড্রোন শটে কয়েকটি অভিযানের দৃশ্য করছি। এখন কথা বলা মুশকিল।’ ১০ মিনিট সময় চেয়ে শট দিতে চলে গেলেন। ছবিতে মিম মন্দিরা নামের পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র করছেন, তাঁর নায়ক জিৎ।
দেড় যুগের ক্যারিয়ারে বিদ্যা সিনহা মিম দেশ-বিদেশ মিলিয়ে প্রায় দুই ডজন ছবিতে অভিনয় করেছেন। কয়েকটিতে অভিনয়ের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন, ঝুলিতে আছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার। তবে আগে যা-ই করুন, অভিনেত্রী মিমের নতুন যাত্রা যে গত বছর মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ দিয়ে শুরু হয়েছে, সেটা মিম নিজেই স্বীকার করেন।
বড় কোনো হিট ছবি হলেই সে ছবির পাত্র-পাত্রীদের কাছে প্রত্যাশা আরও বাড়ে, অভিনয়শিল্পীরাও নতুন কাজ দিয়ে আগের সাফল্যকে ছাড়িয়ে যেতে চান, সে চেষ্টা মিমের মধ্যে পুরো মাত্রায় দেখা গেছে।
পরাণ-এর মাস কয়েক পর মুক্তি পাওয়া ‘দামাল’-এর কথাই বলা যাক। আগে ছবিতে ‘অনন্যা’ হয়ে প্রশংসা পাওয়ার পর ‘দামাল’-এ মিম করেন ‘হাসনা’ চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বছর কুড়ির তরুণীর চরিত্রে এবারও উতরে গেছেন অভিনেত্রী।
মিমের আগের কাজগুলোর কথা মনে করতে করতে তাঁর ফোন, শট শেষ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলো গত বছর করা প্রশংসিত দুই চরিত্র সম্পর্কে। অনন্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, মফস্সলের পাশের বাড়ি মেয়ে টাইপ চরিত্র। মিষ্টি চেহারা, ছেলেরা প্রেমে পড়তে চায়। অনন্যার মধ্যে যেমন একটা নিষ্পাপ ভাব আছে, তেমনি আছে চতুরতাও। প্রেক্ষাগৃহে বসে দর্শক কখনো চরিত্রটিকে নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন, কখনো ইতিবাচকভাবে। নিজের আলোচিত দুই চরিত্র নিয়ে মিম বলেন, ‘অনন্যা চরিত্রটি নতুন ধরনের হওয়ায় দর্শক একটু ধাক্কা খেয়েছেন। আবার দামাল মুক্তিযুদ্ধ ও ফুটবল খেলা ঘিরে। সেসবের মধ্য থেকেও হাসনাকে আলাদা করতে পেরেছেন দর্শক। কাজটি দিয়ে দর্শককে বিশ্বাস করাতে পেরেছি।’ তবে প্রশংসিত দুই চরিত্রের জন্য ছবি দুটির টিমকে কৃতিত্ব দিতে চান তিনি।
‘অনন্যা’ থেকে ‘হাসনা’-দুই ধরনের চরিত্রে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন? মিমের ভাষ্য, ‘যখন অনন্যা করেছি, অনন্যার মধ্যেই থেকেছি; এমনকি শুটিং শেষ হওয়ার পরও বেশ কিছুদিন অবচেতন মনে নিজেকে অনন্যাই ভাবতাম। হাসনার বেলাতেও তাই। অনন্যাকে ঘিরে দর্শকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করা সহজ ছিল না। হাসনা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফিরে যেতে হয়েছে; যখন আমার জন্মই হয়নি। সেই সময়ের একটি চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে কতটা ভাবতে হয়েছে, কষ্ট করতে হয়েছে, বুঝুন।’
মিম জানালেন, অনন্যা বা হাসনার মতো নানা ধরনের চরিত্র করার লোভ তাঁর সব সময়ই ছিল। কিন্তু এত দিন সেভাবে সুযোগ আসেনি। ‘পরাণ’ ও ‘দামাল’-এর পর কাজের ধারা পাল্টে ফেলেছেন মিম- চিত্রনাট্য, চরিত্র বুঝেশুনে তবেই ‘হ্যাঁ’ বলছেন।
কথায়-কথায় নতুন খবরও দিলেন মিম, এবার তাঁকে দেখা যাবে ‘ইয়াসমিন’ চরিত্রে। ছবিটি পরিচালনা করবেন সুমন ধর। ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার সেই ইয়াসমিনের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’। কলকাতা যাওয়ার আগে ছবিটিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি।
ইয়াসমিনের মতো আলোচিত চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে মিম বলেন, ‘পরাণ ও দামাল মুক্তির পর চলচ্চিত্রে আমার নতুন জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে অনেক চিত্রনাট্য হাতে এসেছে। ভেবেছি, বহু বছর পর দর্শক আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে হবে। যেসব চিত্রনাট্য এসেছে, তার মধ্যে গল্প খুঁজেছি, চরিত্র খুঁজেছি, চ্যালেঞ্জ খুঁজেছি। তাই গণহারে কাজ হাতে নিইনি। এই চিত্রনাট্য পড়তে বসে কেঁদে ফেলেছি। চিত্রনাট্য পড়ে যদি অভিনেতা কেঁদে ফেলেন, আমি নিশ্চিত সেই সিনেমা দেখে দর্শকও কাঁদবেন।’