আমিষজাত খাবার কেনার সাধ্য হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ

রাজিব শর্মা »

সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আমিষজাত খাবার মাছ, ব্রয়লার ও মাংসের সরবরাহ বাড়লেও চড়া দামের তেমন পরিবর্তন আসেনি। যে কারণে এসব আমিষজাত খাবারের প্রতি মানুষের বরাবরই সাধ থাকলেও কেনার সাধ্য হারাচ্ছে মানুষ।
নালাপাড়া থেকে রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসা গার্মেন্টস কর্মী মো. ফয়সাল বলেন, ‘ গতবছর দুইবার ইলিশ কিনছিলাম, তখন এসব জাটকা ইলিশ ৩০০-৩৫০ টাকার মধ্যে ছিল। এ বছর পরিবারের কেউ খাবার পাতে ইলিশ দেখেনি।’
একই বাজারে সিএনজিচালিত টেক্সিচালক মো. খোকন বলেন, ‘৩০০ টাকার নিচে কোন মাছই নেই। আর হাজারের নিচে মাংস নেই। এসব খাবার আমাদের মতো গরিবের পাত থেকে উঠে গেছে অনেক আগে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন ও বকসির হাট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে সমুদ্র ও লেকের মাছের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। তবে দামের পরিবর্তন তেমন আসেনি। অতিরিক্ত দামের কারণে ক্রেতাদের মাছ কেনা থেকে বিমুখ হয়ে সবজির বাজারে ফিরতে দেখা যায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সাইজভেদে রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, যা সাধারণত ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই কিনতে পাওয়া যেত। আর পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়, সপ্তাহের ব্যবধানে এ দুইটি মাছের কেজিতে কমেছে ২০ টাকা, আর অনান্য মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তাছাড়া বাজারে কাতলা, কার্পিও, গ্রাসকাপ জাতীয় মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, বোল পোঁয়া ২৬০ থেকে ৩২০ টাকা, টেংরা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, মাইট্যা ৩৮০ থেকে ৬০০ টাকা, মলা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, লইট্যা ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর ইলিশ ৭০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, রুপচান্দা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, লাক্ষা ৬০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর দেশী চাষের মাছের মধ্যে কই,  শিং, শোল, টাকি, আইড়, চিতল বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রবিন দাস বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সমুদ্রের মাছ সরবরাহ বেড়েছে। জেলেদের খরচ ও শ্রমমূল্য বাড়তি দাবি করে ফিশারিঘাটের আড়তদারেরা মাছের দাম কমাচ্ছে না। দুয়েকটি দেশি চাষের মাছের দাম কিছুটা কমলেও অনান্য মাছের দাম তেমন কমেনি।’
আমিষজাত খাবার ব্রয়লার গত দুই সপ্তাহ ধরে উর্ধ্বমুখীতে রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমলেও মাসের ব্যবধানে বাড়তি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। আর অপরিবর্তিত রয়েছে অনান্য মুরগির বাজার। বাজারে সোনালি  ও পাকিস্থানী কক বিক্রি হয়েছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, আর লেয়ার ২৯০ থেকে ৩০০ ও দেশী মুরগি ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি শীতকালীন প্রিয় খাবারের রেওয়াজ থাকায় দেশী হাঁস ৩৫০ টাকা ও চীনা হাঁস ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে ওজন অনুযায়ে প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে। এসব হাঁস অনান্য সময় বিক্রি হতো ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। মৌসুমে হাঁেসর দাম বেড়েছে বলে জানান হাঁস ব্যবসায়ীরা।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, গরু ও ছাগলের মাংসের বাজারও। বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। আর গরুর মাংস হাড্ডি ও হাড্ডিছাড়া মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে।

সবজিতেই স্বস্তি
মাংসের বাজার চড়া থাকলেও গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও স্বস্তির পর্যায়ে রয়েছে শীতকালীন সবজির বাজার। অনান্য বছরের তুলনায় এবছর শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়াতেই দামে স্বস্তির পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাটের সবজি ব্যবসায়ীরা।
বাজারে শিম, শালগম, কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ টাকায়। এছাড়া গত কয়েকমাস ধরে চড়া থাকা আলুর দামও কমেছে। বাজারে মুন্সিগঞ্জের আলু বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় আর বগুড়ার গোল আলু ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অনান্য সবজির মধ্যে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, কহি ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
দাম কমেছে শাকের বাজারেও। বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।
আর পচনশীল মসলা হিসেবে কিছুটা বেড়েছে আমদানি পেঁয়াজ ও আদা। বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় যা গত সপ্তাহে আরও ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। আর ভারতের আদা ১১০ টাকা, চায়না আদা ও রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বকসিরহাটের সবজি ও মুদি ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, গত তিন সপ্তাহ সবজির সরবরাহ বাড়াতেই বেশ দাম কমেছে। আমরাও কম দামে আড়তে পাচ্ছি। আর সবজির ওপর ক্রেতা আগ্রহ বেড়েছে। মাটামুটি সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও আমদানি আদা ও রসুনের দাম বাড়তি রয়েছে।

অপরিবর্তিত রয়েছে মুদিপণ্যের বাজার
বাজারের প্রায়সব মুদি দোকানের পণ্যের দাম চড়া দরের মধ্যে অপরিবর্তিত রয়েছে। মুদির দোকানে ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা সাদা চিনি ১২৫ টাকা, লাল চিনি বাজার সংকট রয়েছে। এছাড়া দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
আমদানি সরবরাহ ভালো থাকা স্বত্ত্বেও গত ছয় মাসে ডালের দাম স্বস্তির পর্যায়ে ফিরেনি। আর গমের আমদানি বাড়ায় দাম কমতির দিকে রয়েছে আটা ও ময়দার বাজার।