সুপ্রভাত ডেস্ক »
সংলাপ করতে সরকার বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কি না, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চেয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ‘সরকারের সঙ্গে সংলাপে বিএনপি আগ্রহী নয়’ বলে ফখরুল যে মন্তব্য করেছেন, সেটির জবাবে এ প্রশ্ন করেন মন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ মনে করেন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনার কিছু নেই। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবেই হবে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করলে নির্বাচিত সরকার থাকাকালেই ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়।
এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি পরের নির্বাচনে আসে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেয়ে’।
সেই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে সেই নির্বাচনে ‘আগের রাতেই ভোট’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে বিএনপি আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও জানিয়ে আসছে।
গতবার সংলাপে বসলেও এবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৩ মার্চ গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংলাপ কার সাথে করব? আমি ২০১৮ এর নির্বাচনের আগে সংলাপ করেছি, তার রেজাল্টটা কী? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই নিজেদের নির্বাচন থেকে সরায়া তারপর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
‘১৫ অগাস্ট আমার বাবা-মার হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আমাকে হত্যার চেষ্টা, বোমা রেখে হত্যার চেষ্টা যারা করেছে আমি তাদের সঙ্গেও বসেছি শুধু দেশের স্বার্থে।’
পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা তো আগে বলেছি যে, তার সঙ্গে সংলাপ করব না। তিনি তো কথাই রাখেন না। আমরা ডায়ালগের কথা সেজন্য বলি নাই। একবারের জন্য আমরা ডায়ালগের কথা বলি নাই।
‘যারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে জেলে আটকে রাখে তাদের সঙ্গে আমরা কী সংলাপ করব?’
ফখরুলের সেই বক্তব্যের জবাবে এবার হাছান মাহমুদ বললেন, ‘আমরা কি তাদেরকে (বিএনপি) সংলাপে ডেকেছি? তাদের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে কোনো সংলাপের তো প্রয়োজন নাই। আমরা তাদের সংলাপে ডাকিও নাই। আমরা যদি ডাকতাম তাহলে তাদের সেই কথা বলার সুযোগ থাকত যে, তারা সংলাপে আসবে কি না।’
‘নির্বাচন তো আওয়ামী লীগের অধীনে হবে না’
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান নিয়ে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হয় না। উনারা যদি আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায়, সেটার কোনো সুযোগ নাই কারণ নির্বাচন আওয়ামী লীগের অধীনে হবে না।
‘নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ ভারত, ইংল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপে জার্মানি, ফ্রান্স এবং আরও অনেক দেশে সরকার যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে, আমাদের দেশেও সেটি হবে। এ প্রশ্নে সংলাপ করার প্রশ্নই আসে না।’
‘মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে বিএনপি’
একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি গত নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৯০০ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও এ ঘটনা ঘটেনি।
‘আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রথমে দেখলাম একজন নমিনেশন পেয়েছেন, পরে দেখি ওটা উল্টে গেছে, আরেকজন পেয়েছেন। তারপর দেখলাম যে, ধানের শীষ বিক্রি করে এলডিপিকে দিয়েছে এবং এর প্রতিবাদে বিএনপির মহিলাকর্মীরা ঝাড়ু মিছিল করল।
‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক সাহেব একটা দেন, ফখরুল সাহেব আরেকটা দেন, রিজভী সাহেব আরেকটা দেন, উনাদের তিনজনের টানাটানিতে যেটা জেতে সেটা ফাইনাল। তাদের নির্বাচনে খুব খারাপ ফল করার পেছনে এগুলো বড় প্রভাব ফেলেছে।’
আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত আমলা বা বড় ব্যবসায়ীদেরকে মনোনয়ন দেয় না বলেও দাবি করেন হাছান।
তিনি বলেন, ‘অনেকে আওয়ামী লীগের নমিনেশন না পেয়ে বিএনপিতে গিয়েছিল এবং মোটা অংকের টাকা দিয়ে নমিনেশন পেয়েছিল। পরে তারা মন্ত্রীও হয়েছিল।
‘এ ধরনের প্র্যাকটিস বিএনপিই করে। কারণ, বিএনপি তো সৃষ্টিই হয়েছে ক্ষমতার হালুয়া রুটি বণ্টন করে ‘রাজনীতির কাকদের’ নিয়ে।’
মির্জা ফখরুল, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও রুহুল কবির রিজভী ‘অন্য দল’ করতেন জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দলছুট নেতাদের, ‘রাজনীতির কাক’দের নিয়ে বিএনপির সৃষ্টি। সেই কারণে তাদের মধ্যে আদর্শ নাই, তাই তারা এভাবে পদ বাণিজ্য করে, নমিনেশন বাণিজ্য করে।’