নিজস্ব প্রতিবেদক »
রোববার বিকাল থেকে ভারত থেকে আবারও আমদানি করা হচ্ছে এমন খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি পেঁয়াজের আড়তে কমতে শুরু করেছে সবধরনের পেঁয়াজের দাম। ফলে রাতের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
গতকাল সোমবার সকালে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় আড়ত পেঁয়াজ শূন্য অবস্থায় রয়েছে। কয়েকটি আড়তে পেঁয়াজ থাকলেও ক্রেতাদের চাপ তেমন দেখা যায়নি। পাইকারি বাজারে সারাদিন ১২৫ থেকে ১৪০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারগুলোতে। খুচরা বাজারে এখনো কেজিপ্রতি বিক্রি করছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে রাতারাতি ১০০ থেকে ১১০ টাকা পেঁয়াজের দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ১৮৫ থেকে ২০০ টাকায়।
এদিকে সোমবার সকালে হিলি বন্দরের পেঁয়াজ আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বন্দরের মোকামে ভারতীয় আগের আমদানি করা পেঁয়াজ ১৬০ টাকা, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় এবং দেশি শুকনা পেঁয়াজ ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারত থেকে আমদানির কোন পেঁয়াজ আসেনি।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) তাদের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ঐ বিজ্ঞপ্তিতে অভ্যন্তরীণ সংকট ও দাম বাড়ার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে দাম কমার কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং পূর্বের দামে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করলেও বাজার ক্রেতাশুন্য দেখা যায়। এমনকি বাজারে আসা অনেক ক্রেতারা চড়াদামে পেঁয়াজ কেনাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
বকসিরহাট খুচরা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. ফরিদুল আলম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষদের নিয়ে তামাশা করছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়কে পুঁজি করে তারা দেশের বাজারকে অস্থির করে তুলছে। তাদের এমন সুযোগসন্ধানী আচরণে সাধারণ মানুষ যে ভোগান্তিতে পড়ছে এটি তারা বুঝার চেষ্টা করছে না। পেঁয়াজ কিনতে আসছিলাম। আজকে পাইকারি বাজারে ১৩০ টাকায় বিক্রি করলেও খুচরাতে ২২০ টাকা। এমন চড়া দামে পেঁয়াজ কেনার কোন মানে হয় না। যার ফলে কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজ কেনা বন্ধ রেখেছি।’
দাম কমার পরও চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ‘গত দুদিন ধরে খাতুনগঞ্জের বাজার থেকে চড়া দামে কিনতে হয়েছে। তাই চাইলেও কমদামে বিক্রি করতে পারছি না।’
এদিকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, গত দুদিন ধরে মধ্যস্বত্বকারবারিরা পেঁয়াজের চড়া দর দিয়েছিল। কিন্তু রোববার রাতে তারা বলেছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হতে পারে এমন সংবাদে শুনে তারা দাম কমিয়েছে। আজ (সোমবার) সকাল থেকে তারা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দর নির্ধারণ করে দেয়।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, খাতুনগঞ্জের প্রায় ব্যবসায়ীর আড়তে তেমন পেঁয়াজ নেই। পেঁয়াজের দামও কমেছে। আজ ১৪০ টাকায় মোকামগুলোতে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সকাল থেকে ক্রেতাশূন্য হওয়াতেই পেঁয়াজ নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।
এদিকে সোমবার হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি না হলেও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে আগের তুলনায় বেড়েছে চীন ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ আমদানি।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, অন্যান্য সময়ের মতো পাকিস্তান ও চীনের পেঁয়াজের আমদানি সরবরাহ ভালো রয়েছে। রোববার চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৬৮ টন আর সোমবার পাকিস্তানের পেঁয়াজ এসেছে ৫৮ টন। জুলাই মাস থেকে সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এসেছে ২ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টন।
অন্যদিকে ৯০ টাকার পেঁয়াজ ১২৫ টাকার বেশিতে বিক্রি কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে যেসব গোডাউন রয়েছে সমিতির মাধ্যমে সেসব গোডাউনের তথ্য প্রদান করবেন। এ তথ্য নিশ্চিত করার জন্য আমরা গণবিজ্ঞপ্তি জারি এবং এর বাইরে কোনো মজুদ পণ্য পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন জেলা প্রশাসন।
সোমবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের মূল্য ও মজুদ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন।
তিনি আরও বলেন, তালিকা ছাড়া কোনো গোডাউনে মালামাল পেলে সেগুলো সাথে সাথে জব্দ করবো। শুধু পেঁয়াজের ক্ষেত্রে নয়, চিনিসহ অনান্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও আমরা সব তথ্য চাইবো। সব কাগজে কলমে থাকতে হবে। কাগজপত্রহীন কোনও কিছুই আমরা ছাড় দিবো না।