সুপ্রভাত ডেস্ক »
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবদার করে রাজউকে আবেদন না করেই প্লট নিয়েছেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট নেন।
শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার্জশিটে এসব কথা উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
চার্জশিটে বলা হয়, প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনানুগ পদ্ধতি লংঘন করে শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই মায়ের কাছে আবদারপূর্বক আবেদন পেশ করেন পুতুল। এরপর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
বরাদ্দকৃত প্লট নিজ নামে রেজিস্ট্রিভুক্ত করে নেন এবং সরকারি জমি আত্মসাৎ করে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিশেষ ক্ষমতাবলে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব ও সহযোগিতায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অনুকূলে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে আইন লংঘন করেন।
রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্ত প্রাপ্তে আরও দুই আসামিসহ শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয়েছে ১৬ জনকে।
মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৮ আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি, হুলিয়া ও ক্রোক পরোয়ানা জারি করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল এ মামলাটির ধার্য তারিখ রয়েছে। ঢাকা মহানগর আদালতে এ চার্জশিট গ্রহণ সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
অবৈধ আনুকুল্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে বর্ণিত পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের অতি মূল্যবান কূটনৈতিক এলাকায় আসামি সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রিমূলে হস্তান্তর করে ও প্লট গ্রহণ করে, প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ ও প্রদান ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ এবং বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের দ্বারা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় দণ্ডযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
শেখ হাসিনা-পুতুল ছাড়াও চার্জশিটভুক্ত অপর ১৬ আসামি হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, তদন্ত প্রাপ্তে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দের অনিয়মের অভিযোগে পৃথক ছয়টি মামলা জানুয়ারি মাসে দায়ের করে দুদক।
তদন্ত শেষ করে দুদক ১০ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এর মধ্যে ১০ এপ্রিল একটি, ১৩ এপ্রিল দুটি এবং ১৫ এপ্রিল তিনটি মামলার চার্জশিট আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দের অনিয়মের অভিযোগে পৃথক ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনার পরিবারের সদস্য ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক।
এসব মামলায় শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। আইননুযায়ী পলাতক থাকা আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবেন আদালত। এরপরও আসামিরা পলাতক থাকলে গ্রেজেট প্রকাশ করে বিচার শুরু করবেন আদালত। সূত্র: বাসস