অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে কোনোভাবেই নিস্তার পাচ্ছে না দেশের মানুষ। কোনো না কোনো অজুহাতে কোনো না কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অসহায় মানুষের অর্থ। আজ এই পণ্য তো কাল অন্য পণ্য। আজ যে দামে কেনা হলো ঠিক সে দামে আগামীকাল তা কেনা যাবে কিনা সেই নিশ্চয়তা নেই। এমনকি সরকারও সে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশটির সরকার আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের বাণিজ্য অধিদপ্তর দেওয়া এক আদেশে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অবশ্য এর আগে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য প্রতি টন ন্যূনতম ৮০০ ডলার বেঁধে দিয়েছিল ভারত। সে নির্দেশ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। তবে তার আগেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় দেশটি।
যদিও পাকিস্তান ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি চালু রয়েছে। বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাই মাস থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৫১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ চীন ও পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে চীন থেকে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৯১ মেট্রিক টন। পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। আপাতত এই দুই দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি চালু রয়েছে। বাজারে এই দু দেশের পেঁয়াজ কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বর্ধিত দামে দোকানগুলোতে বিক্রি হয়েছে মানভেদে কেজিপ্রতি ২১০ থেকে ২২৫ টাকা দরে। পেঁয়াজের দর হঠাৎ চড়া হওয়ায় বাজার না করে ফিরছেন অনেক ক্রেতা। বাজারে এমন পরিস্থিতির দায় নিচ্ছেন না কেউ। ক্রেতারা দুষছেন খুচরা ও পাইকারদের আর পাইকাররা দুষছেন আমদানিকারকদের।
ভারত আগাম ঘোষণা ছাড়া রপ্তানি বন্ধ করায় সমস্যা হয়েছে বটে তবে সে প্রভাব পড়ার কথা তো সপ্তাহ দুয়েক পরে। এতদিন যা আমদানি করা হয়েছে তা তো নিমেষে শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম বাড়ালেন কোন যুক্তিতে। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে তারা এক মুহূর্ত সময় ক্ষেপণ করেন না অথচ দাম কমানোর ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা থাকে উল্টো। তখন তাদের যুক্তি হলো আগের বেশি দামে কেনা। অথচ বাড়ানোর সময় আগে কম দামে কেনা যুক্তি খাটে না।
কথা হলো বাংলাদেশের মানুষ কি তবে এ ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে সারাজীবন জিম্মি হয়ে থাকবে? এদের খপ্পর থেকে বাঁচার কি কোনো উপায় নেই? মরিচের দাম কমালে আলুর দাম বাড়াবে, আলুর দাম কমালে পেঁয়াজের দাম বাড়াবে। মুরগি কমালে ডিমের দাম বাড়াবে, ডিম কমালে টমেটোর দাম বাড়াবে। ব্যবসায়ী তো ভিন গ্রহের কেউ নয়। এ দেশ, এ সমাজেরই সন্তান। তার কি নিজের বিবেক বলতে কিছু নেই? সারাদেশের বাজারগুলো কি সারাক্ষণ পুলিশ প্রহরায় চালানো সম্ভব?
এ প্রশ্ন রাখলাম ব্যবসায়ীদের কাছে।
এ মুহূর্তের সংবাদ