কয়েকদিনের ব্যবধানে নগরে আবার কিশোর খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার খুলশী থানাধীন সেগুন বাগান ক্যান্টিন গেট এলাকায় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মো. সুজন নামে এক কিশোর নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। নিহত সুজন ঝাউতলা বাজারের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল স্বপনের বড় ভাইয়ের ছেলে।
জানা গেছে, সুজন ও তার এক বন্ধু রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। এসময় একটি ইজিবাইক পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার গায়ে ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। ইজিবাইকে ৪/৫ জন তরুণ বসা ছিল। তারা ইজিবাইক চালকের পক্ষ নিয়ে সুজন ও তার বন্ধুর সাথে তর্কে জড়ায়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ ফোন করে আরও কিছু বন্ধুকে ডেকে আনে। এরপর তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরই ফাঁকে সুজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। সুজন মোস্তফা হাকিম কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলো।
স্থানীয়দের অভিযোগ এই কিশোরদের পেছনে সবসময় কোনো না কোনো রাজনৈতিক শক্তি বা ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। যাদের আস্কারায় এরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একসময় এরা মা-বাবা বা অভিভাবকদেরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। জানা গেছে, সুজনের বাবা মাংস বিক্রেতা ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি মারা গেলে পরিবার তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর চলে যায়। পরীক্ষার জন্য সুজন চট্টগ্রামে রয়ে গিয়েছিল।
মাত্র কিছুদিন আগে স্বামীহারা এই নারী তার সন্তানকেও হারালেন। তাঁকে সান্ত¦না দেওয়ার ভাষাও আমাদের নেই। তিনি তাঁর সন্তান হত্যার বিচার চাইবেন কার কাছে? আর চাইলেও বিচার পাবেন তার নিশ্চয়তাও বা কোথায়?
আমরা ঘোরতর এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছি ক্রমশ। এর থেকে উত্তরণের উপায় কী তারও উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না এখন। আমরা জানি না এর শেষ কোথায়? এই তরুণের হত্যাকারী যে বা যারা তারাও তার সমবয়সী, তারাও বয়সে সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ। এরা কেউ তাদের কর্মের পরিণতি জানে না। জানে শুধু ‘হিরোইজম’ দেখাতে। আর তা দেখাতে গিয়ে এই বয়সে তারা খুনের মতো ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হবে তা ভাববার অবসরও তারা পাচ্ছে না।
সব জেনে-বুঝে এই কিশোর-তরুণদের যারা এই পথে ঠেলে দিচ্ছে তারা একবারও ভাবছে না, নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কত মায়ের বুক খালি করে দিচ্ছে তারা। কত স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে, কতজনকে একেবারে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। পেছন থেকে যারা সব কলকাঠি নাড়েন তারা ঠিক না হলে এই অপরিণত সন্তানেরা নিরাপদ হবে না কখনো।
এ মুহূর্তের সংবাদ