সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে বাড়ছে। আবাসিকে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম ১৩ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ৩১ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। বাণিজ্যিকে ৩৮ দশমিক ২৫ ও আবাসিকে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে দুই বার পানির দাম বাড়ালো ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কর্মকর্তারা বলছেন, এখন দাম বাড়ানোর উপযুক্ত সময় নয়। বাজারে সব ধরনের নিত্য পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে পানির দাম এত বেশি বাড়ানো হলে জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়বে। তারা জনগণের কথা চিন্তা না করে অহেতুক পানির দাম বাড়াচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম নেওয়া হতো পাঁচ টাকা ৪১ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ১৫ টাকা ৩২ পয়সা। ২০২০ সালে আবাসিকে পানির দাম হয় ১২ টাকা ৪০ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৫ শতাংশ বেড়ে আবাসিকে ১৩ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৩১ টাকা ৮২ পয়সা। বৃহস্পতিবার থেকে হচ্ছে আবাসিকে ১৮ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৩৭ টাকা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে ওয়াসার পানির নতুন দাম কার্যকর হবে। অর্থাৎ, মাস শেষে বিল দেওয়ার সময় বর্ধিত দামে বিল দেওয়া হবে। দাম বাড়ানোর বিষয়টি ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক আগে মন্ত্রণালয়ে পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। গত মাসে তা অনুমোদন পায়। ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণের টাকা আগামী বছর থেকে কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।’
ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘এমন এক সময় ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে যখন সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেশি। এমনিতেই মানুষের জীবনযাত্রায় সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নতুন করে দুর্ভোগ বাড়াবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাত মাসের মধ্যে দুই বার পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি অযৌক্তিক। প্রকল্প নিয়ে নির্ধারিত সময়ে শেষ করবে না ওয়াসা, বছর বছর ব্যয় বাড়বে। জনগণকে এর মাশুল গুনতে হবে। প্রকল্পের ঋণের টাকা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যৌক্তিক হতে পারে না। চট্টগ্রাম ওয়াসার সিস্টেম লস প্রায় ৩২ শতাংশ। পাইপলাইন ফুটো ও চুরিসহ নানা কারণে এত বেশি সিস্টেম লস। যদি সিস্টেম লস বন্ধ করা যেতো তাহলে পানির দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।’
এদিকে পানির দাম বাড়ানোর বিষয় নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা আহমেদ ছফা বলেন, ‘জানুয়ারিতে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আবার ৩৮ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। দাম বাড়ানোর বিষয়টি মানুষের জীবন যাত্রায় নতুন করে প্রভাব ফেলবে। এখন যেন সবকিছুর দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতায় ওয়াসাও বসে থাকবে কেন! দাম বাড়ানোর চেয়ে পানির দাম কমানো প্রয়োজন।’
২৭ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের পাস-২ শাখা থেকে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সিনিয়র সহকারী সচিব এ কে এম সাইফুল আলমের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬ এর ২২ (১) ও ২২ (৩) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক সরবরাহকৃত প্রতি এক হাজার লিটার পানির অভিকর (আবাসিক) ১৩ দশমিক ০২ টাকার স্থলে ১৮ টাকা এবং অনাবাসিক ৩১ দশমিক ৮২ টাকার স্থলে ৩৭ টাকা নির্ধারণের সরকারি অনুমোদন দেওয়া হলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার ৭৮ হাজার ৫৪২টি আবাসিক ও সাত হাজার ৭৬৭টি বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে। দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে পরিশোধন হয় ৪৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ফেজ-১ প্রকল্প থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প ফেজ-২ থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার ও গভীর নলকূপ থেকে চার কোটি লিটার পানি পরিশোধন হয়। সবমিলে দিনে ৪৫ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াসা সূত্র।