রাজিব শর্মা »
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত মসলাজাত পণ্য আমদানি হলেও খাতুনগঞ্জের আড়তে তার কোন প্রভাব পড়ছে না। গত তিন মাস ধরে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। এর জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন খাতুনগঞ্জের কয়েকটি সিন্ডিকেটকে। আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানের ঈদে যে রসুনের দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা কিছুটা নেমে এলেও গতকাল আবারও বেড়েছে এর দাম। গতকাল বাজারে রসুন বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকা। যা গত কয়েকদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ১৩৫ টাকা। অন্যদিকে আদা বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে আড়তে যে পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা হয়েছে বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত, চীন, মিয়ানমারের আদা, রসুন ও পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। গত কয়েকদিনে হিলি বন্দরের ব্যবসায়ীদের থেকে পর্যাপ্ত রসুন ও আদা সরবরাহ হয়েছে। তাছাড়া দেশীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানির পেঁয়াজের সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু তার বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই খাতুনগঞ্জের আড়তে। বরং অদৃশ্য সিন্ডিকেট নিয়মিত দাম বাড়াচ্ছে। সকাল- বিকাল বাজারের ওঠানামাকে বড় ব্যবসায়ীদের দ¦ারা বাজার নিয়ন্ত্রণ বলে জানান তারা।
সরকারি বাজার তদারকি সংস্থার তথ্যেও রসুন ও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ার চিত্র দেখা যায়। গত এক বছরের ব্যবধানে আমদানির পেঁয়াজে ১৫৫ শতাংশ ও দেশি পেঁয়াজে ৭৬ শতাংশ ও দেশি রসুনে ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এদিকে সরবরাহ বাড়ার কারণে হিলি বন্দর দিয়ে যেসব আদা ও রসুন আসছে তার দাম কমে আসছে বলে জানান দিনাজপুরের আমদানিকারকরা। কিন্তু খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সুর তার বিপরীত।
হিলি বাজারের রসুন আমদানিকারক আবুল হাসনাত বলেন, বর্তমানে বাজারে চীন ও ভারতের আদা, রসুন ও পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তাছাড়া দেশের নাটোরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেশী নতুন চাষের রসুন আসছে। এতে মোকামে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। এ কারণে খুচরা বাজারেও দাম কমছে।
একই বন্দরের আমদানিকারক ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, ভারত থেকে পর্যাপ্ত আদা, রসুন ও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। দেশের পণ্যও পর্যাপ্ত রয়েছে। সরবরাহ বাড়ায় এই তিনটি পণ্যের দাম কমতির দিকে। দাম বাড়ার কোন কথা নয়। বরং দাম কমার কথা। আমাদের থেকে যেসব পণ্য জেলার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছে তার দামও রাখা হচ্ছে কম।
এদিকে গত বুধবার ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি চায়না রসুন বিক্রি হয়েছিল ১৩২ টাকায়, বৃহস্পতিবার ১৪০ টাকা আর গতকাল শনিবার রাতারাতি ২০ টাকা বেড়ে হয়ে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। একই অবস্থা পেঁয়াজ ও আদার বাজারে। সকালে ও বিকালে দাম পরিবর্তিত হচ্ছে।
সরবরাহ বাড়লেও দাম অপরিবর্তিত থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কয়েকজন আমদানিকারক এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অনেক ব্যবসায়ী আমদানি ও এলসি বন্ধের কারণে দাম বাড়তির কথা জানান।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি হলেও তার প্রভাব এখানে পড়ছে না, কারণ সরবরাহ খরচ ও শ্রমিক মজুরি বেড়েছে। তার মধ্যে এলসি জটিলতা রয়েছে। আমরা কখনো আদা ১৭০ টাকার ওপরে বিক্রি করিনি কিন্তু এখন ২৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেক খুচরা বিক্রেতারা কেনা ছেড়ে দিয়েছে।
খাতুনগঞ্জে সক্রিয় সিন্ডিকেট
এছাড়া খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, আমদানিকারকসহ একটি সিন্ডিকেট রসুন-আদার বাজারে দাম ওঠানামায় জড়িত। তাদের ইশারায় বাজারে চায়না রসুনের দাম কমে-বাড়ে। ওই চক্রটি বন্দরে রসুন খালাস হয়নি খবর ছড়িয়ে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দেয়। পরে এই কৃত্রিম সংকটকে কাজে লাগিয়ে বাজারে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয়। এরপর আবার বাজারে রসুনের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে পরদিন দাম কমিয়ে দেয়। শুধু চায়না রসুন নয়, চায়না আদার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
কেন চায়না রসুনের দাম হুট করে বেড়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস সুপ্রভাতকে বলেন, আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও কয়েকদিনের মধ্যে চায়নার রসুনের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে।
পেঁয়াজের বাজার ভারতের ওপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করে এ ব্যবসায়ী বলেন, দেশীয় পেঁয়াজ শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা। দেশীয় পেঁয়াজের যোগান কমলে আমাদের নির্ভর করতে হবে ভারতের পেঁয়াজের ওপর।