সুপ্রভাত ডেস্ক »
২০২৪ সালের শুরুটা ভালোভাবে করেছেন গৌতম আদানি। ‘ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার ইন্ডেক্সের’ তথ্যমতে, ২০২৩ সাল বাজে কাটলেও ভারতের এই পুঁজিপতি আবারও এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়েছেন। আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য ৯৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি এখন বিশ্বের ১২তম ধনী ব্যক্তি।
ট্র্যাকারের তথ্যমতে, গত দুইদিনে স্ব-প্রতিষ্ঠিত এবং কলেজ ড্রপআউট আদানি আয় করেছেন ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর ফলে তিনি স্বদেশী মুকেশ আম্বানিকে সম্পদের হিসেবে ছাড়িয়ে গেছেন। রিলায়েন্স গ্রুপের মালিক আম্বানির সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইনডেক্সের ভাষ্যমতে, ১২ মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের প্রতিবেদন ‘ব্র্যাজেন স্টক ম্যানিপুলেশন এন্ড আকাউন্টিং ফ্রড স্কিমে’ আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনার পরও তিনি আবার এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়েছেন।
আদানির সম্পদের বাজারমূল্য ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরেও জেফ বেজোসের থেকে বেশী ছিলো। কিন্তু জালিয়াতির অভিযোগের কারণে সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে শুরু করে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এই প্রতিবেদনের পর ২০২৩ এর জানুয়ারি পর্যন্ত আদানির মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০২৩ এর জানুয়ারির পর থেকে তাঁর সম্পদের পরিমাণ আবার বাড়তে থাকে। গতবছরের শেষ দিকে ব্লুমবার্গ ইনডেক্স জানিয়েছিলো, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৮৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু এটি ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে তিনি যে পরিমাণ সম্পদের মালিক ছিলেন তার থেকে ৪০ শতাংশ কম ছিলো।
হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, তাদের এই তদন্ত শেষ করতে দুই বছরের মত লেগেছে। আমেরিকান এই ফার্মটি আদানি কোম্পানির ‘আকাশ ছোঁয়া মূল্যায়নকে’ প্রশ্ন করার পাশাপাশি বলেছে, ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ’ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একটি ‘অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ভিত্তির’ দিকে ঠেলে দেয় কারণ একটি কোম্পানির স্টকের পতন ঘটবে কিনা তার উপর ভিত্তি করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অর্থ উপার্জন করে।
আদানি গ্রুপ ৪০০ পাতার একটি প্রতিবেদনে হিন্ডেনবার্গের এই বিশ্লেষণকে খারিজ করে বলেছে, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা ছাড়া কিছুইনা’। কিন্তু এর পরও গত বছরের শুরুর দিকে আদানি বাজারের সমষ্টিগত মূল্যপতন এবং তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের পতন ঠেকাতে পারেননি। ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছিলো।
কিন্তু গত সপ্তাহে ভারতের উচ্চ আদালত বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিলে আদানি গ্রুপের স্টকের মূল্য আবার দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। আদালত থেকে জানানো হয় নতুন করে আর কোনো তদন্ত করার প্রয়োজন নেই।
আদানি এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘সত্যেরই জয় হয়েছে’।
তিনি ‘ভারতের উন্নয়নে নিজের অংশগ্রহণ’ চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান। আদানি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার এই সপ্তাহে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বন্ধু আদানিকে তুলনা করা হতো ব্যবসার মহারথী জন ডি. রকফেলার এবং কর্নেলিয়াস ভ্যান্ডারবিল্টের সাথে, যারা ১৮০০ শতাব্দীতে আমেরিকার সোনালি যুগে একচেটিয়া ব্যবসা করে অনেক নাম করেছিলেন।
আদানি হীরার ব্যবসা দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু করলেও ১৯৮৮ সাল থেকে জরুরি পণ্য বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। এখন তাঁর প্রতিষ্ঠান ভারতে বন্দর, বিদ্যুৎ, মিডিয়া ও জ্বালানি ব্যবসার সাথে জড়িত।
হিন্ডেনবার্গ কেলেঙ্কারির আগে বাজারে আদানির অনেক সুখ্যাতি ছিলো কারণ যেই সকল ব্যবসায়িক খাতে মোদি উন্নতি করতে চেয়েছিলেন, সেই সকল খাতেই তিনি তাঁর ব্যবসার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন।