মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ৩ বছর পার হলো কিন্তু তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার কোন পদক্ষেপই নেয়নি। এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মুখে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রতি সমর্থন জানালেও মিয়ানমার সরকারকে প্রত্যাবাসনে বাধ্য করার মতো তেমন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নেয়নি। কেবল ২০১৭ সালের আগস্টে নয়, তারও আগে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন বাংলাদেশে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে শরণার্থী জীবন যাপন করছে। রাখাইন রাজ্যে অবশিষ্ট যে ৬ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে তারা অনিশ্চিত, অনিরাপদ পরিবেশে বাস করছে। তাদের ওপর নানামুখি নির্যাতন অব্যাহত আছে। সোজা কথায় মিয়ানমার শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাস করা একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সুপ্রতিবেশীসুলভ মনোভাব নিয়ে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু মিয়ানমার এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, বরং নানা ছুতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে। দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গাদের অবস্থান বাংলাদেেশর অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ; জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়ের দায়িত্ব রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে নিরাপদ, মানবিক ও মর্যাদাকর পরিবেশে নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাস নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা।
জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নকে গণহত্যা ও জাতিগত নির্মুলকরণ প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছে অথচ নিরাপত্তা পরিষদ রাশিয়া এবং চীনের বিরোধিতার কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনোরূপ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত বছর এক রায়ে রাখাইনে রোহিঙ্গা নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গাম্বিয়ার করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রাখাইনে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গাম্বিয়াকে গণহত্যা মামলার আরজি পেশ করতে বলেছে।
এক সময় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীন মধ্যস্থতা করার কথা বললেও এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। এদিকে আগামী বছরের জানুয়ারিতে ভারত নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে, এই পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদে এ ব্যাপারে ভারতকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। চীন এবং রাশিয়ার ভূমিকার ওপর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ সুপ্রতিবেশীসুলভ মনোভাব নিয়ে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু মিয়ানমার এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, বরং নানা ছুতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে। দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গাদের অবস্থান বাংলাদেেশর অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ; জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়ের দায়িত্ব রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে নিরাপদ, মানবিক ও মর্যাদাকর পরিবেশে নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাস নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা।