রুশো মাহমুদ »
একজন নেতার চিরবিদায়। শুধুই নেতা! না, ভুল বললাম। তিনি জননেতা। আপদমস্তক রাজনীতিক, গণমানুষের নেতা। এই চট্টগ্রামে হাতেগোনা যে ক’জন ফুলটাইমার রাজনীতিক ছিলেন বা আছেন তিনি তাঁদের একজন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ আল নোমান গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে জাগতিক সব বিষয় থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। বামধারার রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন প্রথম জীবনে। দেশমাতৃকার টানে যুদ্ধে গেছেন। রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংসে ইউপিপি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। একটা বড় সময় কাটে তাঁর শ্রমিক রাজনীতি ঘিরে। চট্টগ্রাম নগরে বিএনপির মজবুত ভিত তৈরি করে দেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। তাঁর করে দেওয়া ভিতের ওপর আজও দাঁড়িয়ে আছে নগর বিএনপি। তৃণমূলে দীর্ঘদিনের গভীর সংযোগই এই সাফল্য এনে দেয় তাঁকে।
সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করেছেন। দেশজ সংস্কৃতির প্রতি একনিষ্ট ছিলেন রুচিবান এই মানুষটি। চলনে-বলনে তাঁরই প্রকাশ ছিল বরাবর। কর্মীবান্ধব নোমান দু’দফায় মন্ত্রী ছিলেন। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করার স্বপ্নবীজ বুনে দিয়েছিলেন তিনি। ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পের বিকাশে কাজ করে গেছেন। তাঁর মন্ত্রীত্বের সময়কালে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুটি (শাহ আমানত সেতু) নির্মিত হয়।
রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থেকে তিনি এই শহরের জন্য কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে। এসব কিছুই চট্টগ্রামের প্রতি তাঁর নিবিড় ভালোবাসার প্রকাশ। চট্টগ্রাম অন্তপ্রাণ মানুষটির চলে যাওয়ায় বিশাল এক শূন্যতা তৈরি হলো। এমনিতেই এখন আর রাজনীতি রাজনীতিকদের হাতে নেই। দুষ্টচক্র এর দখল নিয়েছে।
রাজনীতি মাফিয়ার কালো টাকায় মুড়ে থেকে ক্রমেই নষ্ট হতে চলেছে। এই সময়টাতে রাজনীতির শুদ্ধধারার যখন বড় বেশি প্রয়োজন ঠিক তখনিই তিনি চলে গেলেন। যদিও পরিণত বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে গেছেন তবুও এই ক্রান্তিকালে প্রয়োজন ছিল তাঁর। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল নোমানের মতো সময়ের সাহসী সন্তানদের এখন বড় বেশি দরকার।
আগে রাজনীতিতে আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চা ছিল। লক্ষ্য ছিল মহৎ, স্বপ্ন ছিল বড়। বিপরীতে রাজনীতি এখন পেশা, বৈষয়িক ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার। ত্যাগের বিপরীতে বিত্ত ও ভোগই মুখ্য। আব্দুল্লাহ আল নোমান ছিলেন ত্যাগী ও আদর্শিক রাজনীতির পথিকৃৎ।