শারদীয় দুর্গোৎসব
শরতের দুর্গাপূজা এবার হেমন্তে
রুমন ভট্টাচার্য :
শারদীয় দুর্গোৎসবের পূণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া আজ। দেবীপক্ষের সূচনা। পুরাণমতে, এদিন দেবীর দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। মহালয়ার অর্থ হচ্ছে মহান আলোয় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে আবাহন। চ-ী পাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আজ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসবের সূচনা ও সময় গণনা। আজকের এই দিনে দেবীকে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আসার আহ্বান জানিয়ে পূজা, চ-ী পাঠ ছাড়াও নানা আয়োজন রয়েছে পূজাম-পগুলোতে।
কিন্তু এবার মহালয়ার প্রায় ৩৫ দিন পর অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবীর বোধন বা মহাষষ্ঠী আগামী ২২ অক্টোবর। এবার আর আশ্বিনে পূজা হচ্ছে না। শরতের দুর্গাপূজা এবার হবে হেমন্তে। তবে এই যে প্রথম এমন হচ্ছে তা কিন্তু নয়। জানা গেছে, ১৯৮২ আর ২০০১ সালেও মহালয়ার বেশ পড়ে দুর্গাপূজা হয়েছিল।
কেন এমন হল?
হিন্দু শাস্ত্র মতে যদি কোনও মাসে দুটি অমাবস্যা পড়ে যায়, তাহলে সেটি হয় মলমাস। ২০২০ সালে আশ্বিন মাস হয়ে গেছে মলমাস। আজ ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া অমাবস্যা। আর আগামী ১৬ অক্টোবর আরেক অমাবস্যা। এই দুই অমাবস্যার মধ্যে পড়ে দুর্গাপূজো এবার পিছিয়ে হয়ে যাচ্ছে কার্তিকে। এছাড়া মলমাসে যে কোনো শুভ কাজ নিষিদ্ধ।
মহালয়া শব্দের সন্ধি হল মহা+আলয়। মহা শব্দের অর্থ বিশাল এবং আলয় শব্দের বাড়ি বা গৃহ। দুর্গাপূজার দুই পক্ষের একটি পক্ষ হলো পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। পিতৃপক্ষের অবসান শেষে সূচনা হয় দেবীপক্ষের।
সনাতন ধর্মে তিনটি অমাবস্যার কথা উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হল আলোক অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা এবং দীপান্বিতা অমাবস্যা। অমাবস্যা স্ত্রী লিঙ্গবাচক শব্দ। মহালয়া অমাবস্যা হয় আশ্বিন মাসে। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর পরের দিন প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবীপক্ষের।
সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে, বিবাহ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বরা, যাদের পিতা-মাতা তাদের পিতা-মাতার জন্য, সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে খুশি করা। সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করে, পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন।
সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন এটি।
এদিকে শুভ মহালয়া উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন মাঙ্গলিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সকাল ৮টায় চ-ীপাঠ, ১০টায় মহালয়া পূজা, বেলা ১টায় অঞ্জলি প্রদান, দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে প্রসাদ বিতরণ, বিকাল ৩টায় ধর্মীয় আলোচনা সভা, বিকাল ৪টায় শঙ্খ ও উলুধ্বনি প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত অনুরোধ জানিয়েছেন।