১৯৪৭ সালের পূর্বে আগ্রাবাদ এলাকা মূলত একটি গ্রাম ছিল। ঔপনিবেশিক শাসনকাল শেষ হওয়ার পর ১৯৫০ সালের দিকে এলাকার উন্নয়ন শুরু হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা হচ্ছে আগ্রাবাদ। দেশি-বিদেশি ব্যাংক-বীমা কোম্পানিসহ সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক ও ব্যক্তি মালিকানার অফিসসমূহ এখানে অবস্থিত। বড় বড় অট্টালিকার ভিড়ে অনেকটা আড়াল হয়ে থাকা বিশাল এক জলাশয় রয়েছে এই বাণিজ্যিক এলাকার ভিতর। যা আগ্রাবাদ ডেবা নামে পরিচিত।
১৯০৮ সালে গোসাইলডাঙ্গা মৌজার জমি রেলওয়ের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। জানা যায়, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে বন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সময় প্রয়োজন হয় লাখ লাখ টন মাটি। তৎকালীন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে এই মাটি সংগ্রহের জন্য এখানে খনন করে। তাতে বিশাল এক জলাশয় তৈরি হয়। এই জলাশয় থেকে পানি সরবরাহ করা হতো জাহাজে, রেল ইঞ্জিনে এবং আবাসিক এলাকায়।
পাড়সহ জলাশয়টির মোট আয়তন ২৭.৪ একর। আগ্রাবাদ ডেবার মালিকানা মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ের। প্রায় ৩ একর পরিমাণ জায়গা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নামে বিএস খতিয়ানভুক্ত করার কারণে ভূমির মালিকানা নিয়ে রেলওয়ের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। গত বছরের শুরুতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক সিদ্ধান্তে বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা যায়।
এই বিশাল জলাশয়টি অনেকটা অনাদরে অযতনে দখল-দূষণে হুমকির মুখে। ফিবছর রেলওয়ে মৎস্য চাষের নামে নিয়মিত ইজারা দিয়ে আসছে। অথচ এই বিশাল ওয়াটার বডির প্রকৃতগত সৌন্দর্য ঠিক রেখে এবং পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে একটি উন্মুক্ত ও নির্মল বেড়ানোর জায়গা হিসেবে গড়ে তোলা যেত। যার পাড় জুড়ে থাকবে সবুজ উদ্যান আর দীর্ঘ হাঁটা পথ।
এই জলাশয় নিয়ে বহুকাল আগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খানিকটা বাণিজ্যিক ধাচের একটি উদ্যোগ নেয়ার কথা শোনা যায়। তখন ওয়াটার বেইজড এন্টারটেইনমেন্ট প্রকল্পের চিন্তাভাবনা করেছিলেন সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনেরও একটি উদ্যোগের কথা জানা যায়। যার সাথে যুক্ত আছেন প্রবাসী স্থপতি আদনান মোর্শেদ। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের ভয়ের দিক হচ্ছে বাণিজ্যিক প্রবণতা, দোকানদারির সীমাবদ্ধতা থেকে তারা এখনো বের হতে পারেনি।
সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যত মাস্টারপ্ল্যানে চট্টগ্রামের ওয়াটার বডি সংরক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে আগ্রাবাদ ডেবা ও আশকারদীঘি নিয়ে তাদের বিশেষ পরিকল্পনাও আছে বলে সিডিএ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আমাদের দাবি একটাই পাবলিক প্লেস হতে হবে অবাণিজ্যিক, সবার জন্য উন্মুক্ত।
আগ্রাবাদ ডেবার অ্যারিয়াল ভিউ ক্যামেরাবন্দি করেছেন শোয়েব ফারুকী
লেখা : রুশো মাহমুদ