জীবন ও মৃত্যুর গান
শবদেহের মুখ আমি দেখি না, আত্মীয় হলেও।
মুখরতার দিনগুলো মনে রাখি, হাসিকৌতুকে ভরা জীবনের
স্পন্দনকে রাখি স্মৃতির পাতায় মুড়িয়ে।
মৃত মাছেরা জলে ভেসে উঠলে তাদের গহীন জলের জীবনের
চপলতা কেউ মনে রাখে না, শুধু স্তুপ করা নৈঃশব্দ আর ক্ষুধার্ত
পাখিদের কোলাহল চোখে রাখি।
এভাবে জীবন ও মৃত্যুর গানে আমাদের হাসি আর বেদনাবোধে
ঘুমহীন রাতগুলো একসময় নিথর হলে, আত্মরক্ষার ছলে
আলোর জন্য আমাদের আকুলিবিকুলি ভোরের পাখিদের গান হয়ে যায়।
জীবনাবসানে আমাদের স্বচ্ছ- অস্বচ্ছ শোকের মেয়াদপূর্তি হলে
আরেকটি শোকের বার্তার জন্য অপেক্ষা করে থাকি আর মৃতের
জন্মদিনেও খুশির শুভেচ্ছাবাণী লিখি ফেসবুকে।
আমরা বাঁচি, মৃত্যুকে মহিমান্বিত করার বাসনায়।
বেসুরো
সুর নেই
তবু, বাঁশিতে ফুঁ দিলেই প্রেমিকার কাছে তা’ চৌরাশিয়ার বাঁশি মনে হয়
প্রেম এক অলৌকিক ঔষধি লতাপাতার নির্যাস
যাক্ষত নিরাময়ে রাস্তার পাগলকেও সেরা কবিরাজ বানিয়ে দেয়
আর, এক মজনু রিকশাচালক প্যাডেল চালাতে চালাতে
বাঁশিতে করুণ সুর তুলে অলিগলি, ফ্ল্যাটবাড়ির রান্নাঘরের
জালির ফাঁক দিয়ে হারানো প্রেমিকাকে খোঁজে।
মৌন দিঘির শাপলাপাতায় উদভ্রান্ত ফড়িং সঙ্গিনীর আশায়
বসে ঝিমোয়, বহুগামীনী তখন উলুখাগড়ার ফাঁকে নতুন সঙ্গীর
সাথে নেচে নেচে পুচ্ছ দোলায়, আকাশের রঙ ফিকে হয়ে এলে
নিরাশার জলে তারাগুলো কাঁপতে থাকে।
এভাবেই ব্যর্থ বাঁশিওয়ালা, ধনীর হেঁসেলের গৃহকর্মী মেয়েটি
আর মৃতবৎ ফড়িঙ অপার্থিব বেদনায় একসময় পার্থিব
অন্ধকারে নেতিয়ে পড়ে।
সময়
তাকে একলা আসতে বলি, সে আসে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে।
ব্যথিত সময়, তার হাতের মুঠোয় এতো লাভা, চোখে এতো
অঙ্গার আর ডালপালায় এতো পোড়া ক্ষত!
শ্মশানের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা পাতাহীন মূক বৃক্ষের মতো আমি অসহায়, যেন
পরিবার থেকে তাড়িয়ে দেয়া এক লোলচর্ম বৃদ্ধ, যাকে সজোরে
জড়িয়ে ধরতে সময় হাত বাড়িয়ে রাখে
পেছনে যেতে যেতে আমি দেয়ালে সেঁধিয়ে যাই, বড়ো ভয়
এইসব সকৌতুক আলিঙ্গনে।
তবু তাকে বসতে দিতে হয়, বিভিন্ন ব্যঞ্জনে আপ্যায়ন করি, যেন
তার ক্রুর দৃষ্টিতে হাড় ফেটে না যায়, মাথার খুলিতে যন্ত্রণা বাসা না বাধে
শরীরের খোড়লে বিষাক্ত সাপেদের বাস গড়ে না ওঠে।
সময়, বড়ো ক্ষমাহীন, নির্দয়
তার আগমন বিলম্বিত করতে কতো টোটকা নিই, যেন সে ধীরপায়ে এগোয়।
অথচ, তাকে ঠেকাবার সাধ্য পরাক্রান্ত চেঙ্গিস খানেরও ছিল না
আর আমি, খরস্রোতে ভাসতে থাকা এক দুমড়ানো কুঁড়েঘর, দূর থেকে
যার দিকে তাকিয়ে বেহুদা হাহুতাশ করে পরিতুষ্ট স্বজনেরা।
স্তন্যদায়িনী
দুর্ভিক্ষদিনে
ভিক্ষুক ছিলাম না বলে কারো কাছে এক পোয়া চাল চাইতে
পারিনি। আমাদের আধপেটা খাইয়ে তুমি অভুক্ত সারা রাত,
সুপুরিবাগানের আড়ালে সুখি চাঁদের মত হাসতে। এখন ভাতের
স্তুপের ওপর হাত রেখে তোমার মুখে দুটো লোকমা তুলে দিতে
যখন ডাকি, তুমি পাকা ধানক্ষেতের ওপর দিয়ে ফড়িং হয়ে
উড়ে উড়ে পাটিপাতার ভাতরঙ ফুলের ওপর বসে রঙচঙা
পাকাবাড়িটার দিকে তাকাও।
স্তন্যদায়িনী, তোমার দুধের ঘ্রাণের দাম মেটাতে নিজেকে
নিলামে তুলতে কেয়ামততক আমি দাঁড়িয়ে থাকার পণ করে আছি।
প্রকাশিত গ্রন্থ (কবিতা)
যে তুমি কাঁদাও এসে
চোখের তারা সকল মেয়ের নাচে না
কষ্ট নাও সমানে সমান
যে বিষ ছুঁয়েছে রক্ত
জলের কাতর ডানা
দরিয়া কাঁদে না দাঁড়ের আর্তনাদে
তোমাকে প্রার্থনার মত ডাকি
হাড়ের হরিণী
নির্বাচিত প্রেমের কবিতা
নির্বাচিত কবিতা
শ্রেষ্ঠ কবিতা
ছড়া ও কিশোরকবিতা
মেঘ তোমাকে দিলাম ছুটি
ব্যাঙের ছানা ইস্টি নয়
এমন নদী পেতাম যদি
মেঘের কি বাড়ি নাই
ইহানের জন্য ছড়া