সুপ্রভাত ডেস্ক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সংস্কার শর্তাবলীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে কর্মসূচি শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
আইএমএফ যেসব সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে, তারমধ্যে একটি হলো শুল্ক আইনের সংশোধন। এদিকে, রাজস্ব বোর্ডও এই সংস্কার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইতোমধ্যেই প্রস্তাবিত আইনটি সংসদে জমা দিয়েছে তারা। খবর টিবিএস’র।
এছাড়া, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি মিড-টার্ম রাজস্ব কৌশল বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। এসব কৌশল বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোকে আরও ভালভাবে পরিচালনা ও প্রশমিত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট (সিআরএমইউ) প্রতিষ্ঠা করবে তারা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট প্যাকেজ অনুমোদন করার পর এসব এজেন্ডা উল্লেখ করেছে আইএমএফ। সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এজেন্ডাগুলো ট্যাক্স দক্ষতা উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তারা বলেছে যে এই সংস্কারগুলি বাস্তবায়ন করা রাজস্ব কর্তৃপক্ষের জন্য একটি কঠিন কাজ হবে না, তবুও এটি অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং হবে যেমন কর ছাড় প্রত্যাহার করা এবং আগামী বছরের মধ্যে কর-টু-জিডিপি অনুপাত ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি করা।
কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন যে এর জন্য সরকার, করদাতা এবং রাজস্ব কর্তৃপক্ষ সহ সকল স্টেকহোল্ডারদের থেকে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা এবং প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। তারা বলছেন, এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা রাজস্ব কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন কাজ না হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জিং হবে। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হিসেবে কর ছাড় প্রত্যাহার করা ও আগামী বছরের মধ্যে ট্যাক্স-টু-জিডিপি অনুপাত ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন তারা।
কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, এর জন্য সরকার, করদাতা এবং রাজস্ব কর্তৃপক্ষ সহ সকল স্টেকহোল্ডারদের থেকে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা এবং প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশে ৮.৬ মিলিয়ন রেজিস্টার্ড ট্যাক্সপেয়ার (ট্যাক্সপেয়ারর্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী) আছে। এটি আগামী ২০২৬ সাল নাগাদ ১০ মিলিয়ন করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে স্বচ্ছতা আনতে ২০২৬ সালের মধ্যে ৩ লাখ ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন ইনস্টল করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যার মাধ্যমে ১০৫০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্বের আশা করছে এনবিআর।
এছাড়া, আইএমএফ সেভিংস ইনসট্রুমেন্ট বিক্রি এক চতূর্থাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে। ২০১৯ সালের বিবেচনায় ইতোমধ্যে তা ৭০% কমেছে।
আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক শাখার মধ্যে তথ্য ভাগাভাগি জোরদার করার বিষয়েও কথা বলেছে আইএমএফ। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
তাছাড়া, প্রতি মাসের রাজস্ব সংক্রান্ত তথ্য পরবর্তী ৬ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করার শর্ত রয়েছে। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতি মাসের তথ্য এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও মাঝে মাঝে কোন কোন তথ্য প্রকাশ করতে এক বছরও দেরি হয়। সদ্য পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভে যাওয়া এনবিআরের আয়কর বিভাগের সদস্য প্রদ্যুত কুমার সরকার বলেন, ‘আইএমএফ এর সংস্কার কর্মসূচী কঠিন নয়। কিছু কিছু ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু করেছে এনবিআর।’ ‘তবে অব্যাহতি কমিয়ে আনা রাতারাতি সম্ভব হবে না। আর রাজস্ব আদায়ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ’, যোগ করেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে জিডিপিতে রাজস্বের অবদান (ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও) কমতির দিকে। অথচ আইএমএফ এর সংস্কার কর্মসূচীর শর্ত মানতে গেলে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১৯ শতাংশ গ্রোথ রেটে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
আবার দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতে বছরের পর বছর ধরে যে ট্যাক্স এক্সেম্পশন (ট্যাক্স এক্সপেনডিচার) দিয়ে আসছে সরকার, তা থেকেও রাতারাতি বের হয়ে আসা সম্ভব নয়।
পলিসি রিসার্চ ইন্সিটিটিউটের ডিরেক্টর ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘আইএমএফ এর যেসব সংস্কার কর্মসূচী তার বেশিরভাগই পরিপালন করা কঠিন নয়। তবে রাজস্ব আদায় আগামী তিন বছরে জিডিপির ১.৭ শতাংশ বাড়ানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’
এ বিষয়ে প্রদ্যুত কুমার সরকার বলেন, ‘যে হারে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে, তা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।’
‘এছাড়া বছর বছর যেসব শিল্প বা অন্যান্য খাতকে অব্যাহতি দিয়ে আসা হয়েছে, তা রাতারাতি বাতিল করাও চ্যালেঞ্জিং হবে।’
তিনি বলেন, ‘ট্যাক্স এক্সপেনডিচারের (অব্যাহতি) ট্রিকল ডাউন ইফেক্ট বা সুবিধা অর্থনীতি পেয়েছে।’
২০২১ সালে এনবিআরের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২০ অর্থবছরে বিভিন্ন সেক্টরে বৃদ্ধির সুবিধার্থে প্রায় ২.৫ লাখ কোটি টাকার কর ছাড় দিয়েছে সরকার। সে বছর তারা ২.১৮ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে।
মোট ছাড়ের মধ্যে, কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য পণ্য আমদানির জন্য ৪৬,৭৫৫ কোটি টাকা এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের বন্ড সুবিধার জন্য ১,৫১,৭৩৮ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছিল। ভ্যাট এবং আয়কর ছাড়ের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফ এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ৭.৮%। গত কয়েক বছরে এই রেশিও না বেড়ে কমতির দিকে গেছে।
তবে কোন কোন খাতে কী ধরনের অব্যাহতি বাতিল করতে হবে, সে বিষয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোন কর্মসূচী দেওয়া হয় নি।
গত বৃহস্পতিবার এক প্রাক বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম বলেন, ‘আইএমএফ এর ট্যাক্স টু জিডিপি’র হিসাব নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা হয় না। আমরা যে ছাড় (ট্যাক্স এক্সেম্পশন) দিচ্ছি, তার সুবিধা অন্যভাবে আনছি।’