সুপ্রভাত ডেস্ক »
বেদি ও স্তম্ভের কাজ শেষ হলেও চট্টগ্রামে নতুন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও সময় লাগবে; যে কারণে আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনে এবারও আগের বিকল্প স্থানে যেতে হচ্ছে।
মাসখানেকের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করে আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান নতুন শহীদ মিনারে করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর আগেই প্রস্তুতি শেষ করার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ।
এজন্য এবারও ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান মিউনিসিপ্যাল স্কুলের অস্থায়ী শহীদ মিনারে হবে বলে তিনি জানান। খবর বিডিনিউজের।
চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু পুরনো শহীদ মিনার ভেঙে নতুন করে নির্মাণ এবং সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরির কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। এতদিনে মূল বেদি ও স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বেদির নিচের অংশে গ্রানাইট বসানোর কাজ চলছে। বাকি আছে রঙ করা ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ।
এ অবস্থায় শহীদ দিবসের অনুষ্ঠান সূচির জন্য নতুন শহীদ মিনার ‘আংশিক’ প্রস্তুত করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। তবে এতে সংশ্লিষ্টরা রাজি হয়নি; পুরো কাজ শেষে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান সেখানে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, ‘শহীদ মিনারের মূল বেদী ও স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শেষ। কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি আছে। ২৬ মার্চের মধ্যেই সব শেষ হবে আশাকরি।’
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার তাগাদা দিয়েছিলেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, ‘তারা আংশিকভাবে প্রস্তুত করে দিতে চেয়েছিল ২১ ফেব্রুয়ারির জন্য। কিন্তু পুরো কাজ শেষ না হলে যেহেতু ব্যাপক লোক সমাগম হবে। তাই সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ২৬ মার্চের মধ্যে পুরো কাজ শেষের আশ্বাস দিয়েছে। কাজের গতি দেখে মনে হয়েছে সেটা সম্ভব। তবে স্তম্ভের পিছনের দেয়ালে যে ম্যুরাল করা হবে সেটা মার্চেও শেষ হবে না।’
কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও দুয়েকটি বিষয়ে তাদের নতুন প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তমঞ্চ অংশে গ্রিনরুম করা হচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। সেখান থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দর্শকের সামনে দিয়ে হেঁটে মঞ্চে উঠতে হবে। এভাবে গ্রিনরুম করা উচিত হয়নি। এটা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছি।’
‘শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো আগের মত শুধু রঙ করা হবে বলে তারা জানিয়েছিল। আমরা বলেছি এত টাকার প্রকল্প শুধু রঙ কেন করা হবে; যাতে স্তম্ভে গ্রানাইট বা স্বচ্ছ কিছু লাগানো হয়। তারা এসব প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।’
সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভেঙে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
২৩২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরি অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও ৮তলা মিলনায়তন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে।
প্রকল্পের আওতায় ২৫০ জন ধারণক্ষমতার একটি উন্মুক্ত গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ হচ্ছে। মাঝের অংশে আগের মতোই শহীদ মিনার রাখা হয়েছে।
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের দুই অংশের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে রাস্তার ২১ ফুট ওপর দিয়ে একটি প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্লাজা দিয়ে হেঁটে কমপ্লেক্সের উভয় অংশে চলাচল করা যায়।
শহীদ মিনার অংশে মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার ও প্লাজা নির্মাণ করতে যে নকশা করা হয়, তাতে আগের শহীদ মিনারটির ভিত্তি ভাঙার পাশাপাশি মিনার আরও উঁচুতে স্থাপন করতে হচ্ছে।
এ কারণেই পুরনো শহীদ মিনারটি সাময়িকভাবে সরানোর কথা ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে জানিয়েছিল গণপূর্ত বিভাগ। তখন সাংস্কৃতিক সংগঠকদের কেউ কেউ আপত্তি জানালেও একই নকশায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাসে তারা রাজি হয়। পাশাপাশি এবারের বিজয় দিবসের মধ্যেই কাজ শেষ করার দাবিও জানিয়েছিল তারা।
এরপর ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পুরনো কাঠামো ভেঙে নতুনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এসময়ে প্রকল্পটির বাজেট বেড়ে ২৮১ কোটি টাকা হয়েছে; কাজ শেষ করার লক্ষ্য ২০২৩ এর জুনের মধ্যে। তবে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের পুরো কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
গর্ণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, ‘প্রকল্পের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ কিছু সরঞ্জাম বিদেশ থেকে এলসির মাধ্যমে আনতে হবে। সেকারণে সময় লাগছে। অন্য কাজ পুরোদমে চলছে।’
নির্মাণ কাজের জন্য পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলায় ৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বিকল্প একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। সেখানেই গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান হয়।
১৯৬২ সালে নগরীর কেসি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে চট্টগ্রাম নগরীর প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৭৪ সালে এটি বর্তমান রূপ লাভ করে।
চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সবাই শহীদ মিনারেই আসেন।