শুক্রবার জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ২০২৪ এ ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট : স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মানবিক ও সময়োপযোগী একটি প্রসঙ্গ তুলেছেন। বক্তব্যে শেখ হাসিনা মোট ছয়টি পরামর্শও তুলে ধরেন। বর্তমান নানান দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্পদের সংস্থান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মানবতার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে, তখন সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষার পথ অনুসরণ করলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। তিনি অস্ত্রের পেছনে দেদার খরচ না করে সেই অর্থে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য তহবিল আরও বড় করার আহ্বান জানান।
জলবায়ু তহবিল নিয়ে প্রথম প্রস্তাবে জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ ছাড় করার সমাধান খুঁজে বের করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোকে পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে হবে। ২০২৫ সালের পরে নতুন ‘জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা’ নিয়ে একমত হওয়ার ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে যা গাজা ও অন্যত্র বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞারও বিরোধিতা করেন তিনি। বলেন, এর প্রভাব অনেক দূরেও অনুভূত হয়। জলবায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের ‘তীব্র ভারসাম্যহীনতা’ দূর করতে অভিযোজন অর্থায়নের আকার অন্তত দ্বিগুণ করারও প্রস্তাব করেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণে অবদান নগণ্য যা বৈশ্বিক নির্গমনের ০.৪৭%-এর কম হলেও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সপ্তম স্থানে থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০৫০ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের বার্ষিক জিডিপি ক্ষতি হবে ২ শতাংশ। এই হারে ২১০০ সালের মধ্যে, ক্ষতি ৯ শতাংশ পর্যন্ত হবে। আরো অনুমান করা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে। প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন গুরুতরভাবে অপর্যাপ্ত- এমন মত প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু অর্থায়ন এবং এর হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞার অনুপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ ধারণা করেছিল, কভিড-১৯ মহামারির পর বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ শুরু হবে। জাতিসংঘের মহাসচিবও এমন ধারণা পোষণ করেছিলেন মহামারির সময়ে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে বিপরীত ঘটনা। মহামারিকাল শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বিশ্ব পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলেছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
অথচ পরিবেশ বিপর্যয় রক্ষায় এখনই বিশ্বনেতাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। অস্ত্রের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে তা পরিবেশ রক্ষায়ই ব্যয় করা উচিত এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী প্রস্তাব আর কিছু হতে পারে না।
এ মুহূর্তের সংবাদ