অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক

চট্টগ্রামে চাঁদার দাবিতে নির্মাণাধীন একটি ভবনে গিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছোড়ার অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমে। নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কে রোববার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে সংবাদকর্মীকে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলি ছোঁড়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।ভিডিওতে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনটিতে শ্রমিকরা মেশিনে সিমেন্ট আর পাথর মেশানোর কাজ করছিলেন। এসময় ‘হুডি’ পরা এক যুবক অস্ত্র হাতে ফটকে গিয়ে দাঁড়ান। তার পাশ দিয়ে জ্যাকেট পরা এক যুবক ভেতরে ঢুকে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি ছুড়লে শ্রমিকরা দৌঁড়ে পালিয়ে যান।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালানো এবং বিপুল অঙ্কের চাঁদা দাবির যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছে, তা কেবল উদ্বেগজনকই নয় বরং প্রশাসনের সক্ষমতার ওপর এক বড় প্রশ্নচিহ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে নির্মাণাধীন ভবনের মালিক ও প্রকৌশলীদের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং বাধা দেওয়ার অভিযোগগুলো নাগরিক জীবনকে এক ভীতিগ্রস্ত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
​একটি আধুনিক ও সভ্য সমাজে দিনের আলোতে অস্ত্র প্রদর্শন করে গুলি চালানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণত দেখা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা একদল অসাধু ব্যক্তি বা তথাকথিত ‘কিশোর গ্যাং’-এর সদস্যরা এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত। তাদের মূল লক্ষ্য থাকে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নেওয়া অথবা সরাসরি মোটা অঙ্কের ‘প্রোটেকশন মানি’ বা চাঁদা আদায় করা। যখনই কোনো জমির মালিক বা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান তাদের অন্যায্য দাবিতে সায় দেয় না, তখনই শুরু হয় অস্ত্রের মহড়া ও গুলি বর্ষণ।
​এই চাঁদাবাজ চক্রের কারণে চট্টগ্রামে আবাসন শিল্প চরম সংকটের মুখে। অনেক সাধারণ মানুষ সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে গিয়ে এই সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। নির্মাণ খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের কাজ থমকে যাওয়ায় অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতেও সাহস পান না। কারণ, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
​পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বুঝতে হবে, এ ধরণের অপরাধ দমনে কেবল ‘রুটিন অভিযান’ যথেষ্ট নয়। প্রকাশ্যে যারা অস্ত্র উঁচিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, তাদের রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় যাই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে এই চাঁদাবাজ চক্রের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সময়ের দাবি। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রের উৎস খুঁজে বের করে তা বাজেয়াপ্ত করার সাঁড়াশি অভিযান চালানো জরুরি।