সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
“নেন ভাই নেন, তাড়াতাড়ি শেষ করেন ভাই। অনেকদিন পর বাসায় যাবো“। বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটার নুরুল হাসান সোহান খেলার মাঠে সাকিব আল হাসানের উদ্দেশ্যে এমন কথা বলে ভাইরাল হওয়ার পর ঠিক কখন বাসায় গিয়েছিলেন, কী করলেন প্রায় তিন মাস পর বাসায় ফিরে?
বিবিসি বাংলাকে সোহান বললেন, সোমবার রাতে শেষ পর্যন্ত আর বাসায় ফেরা হয়নি তার। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা টিম হোটেল ছেড়েছেন মঙ্গলবার। বাসায় ফিরেই একজন অসুস্থ স্বজনকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয় সোহানকে। সেখান থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।
খেলাধুলার পাশাপাশি পারিবারিক এই ব্যস্ততাও উপভোগ করেন বলে জানালেন সোহান।
৯০ দিন বাড়ি ফেরা হয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের, ঢাকায় থেকেও অনেকেই ঢাকার বাসাতেই যেতে পারেন না এখন কোভিড প্রটোকলের কারণে, তাই শেষ টি টোয়েন্টিতে যখন অস্ট্রেলিয়ার একটি উইকেট ফেলা বাকি তখন সাকিবের উদ্দেশ্যে নুরুল হাসান সোহান বলেন, ‘নেন ভাই নেন, তাড়াতাড়ি শেষ করেন ভাই। অনেকদিন পর বাসায় যাবো।‘
স্ট্যাম্প মাইকে শোনা যায় এই কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই দুটো লাইনের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা এটা শেয়ার করছেন।
অনেকে বলছেন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে পাত্তা না দেয়ার কথা। কিন্তু নুরুল হাসান সোহান বলছেন, “আমরা যে পরিস্থিতিতে থাকি সেখানে আসল খেলা হয় খেলার মাঠের বাইরে। কোভিড পরিস্থিতি টানা হোটেলে থাকতে হয়, এই সময়টা খুব কঠিন। বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল।“
ঢাকা থেকে হারারে, হারারে থেকে আবার ঢাকা ফিরে আর বাড়ি ফেরা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলে থাকা ক্রিকেটারদের।
মুশফিকুর রহিম এর মাঝে হারারে থেকে আগে ঢাকা ফিরেও দলের সাথে যোগ দিতে পারেননি বায়োবাবল ভাঙার কারণে।
সেই বাড়ি ফেরাই যেন মূখ্য হয়ে উঠলো স্ট্যাম্প মাইকে উঠে আসা কথায়, সোহান বলেন বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি তিনি।
তিনি বলেন, “খেলার জন্য যেটুকু ত্যাগ করতে হয় সেটা ত্যাগ বলা যায় না, পেশার অংশ, প্রফেশনাল ক্রিকেটার হিসেবে এটা মেনে নিতেই হবে।“
“তবে এটাও সত্যি দীর্ঘদিন হোটেলে কাটানোর পরে বাসায় আসা সবার সাথে দেখা করা একটা বড় ব্যাপার এখন।“
চার বছর পর সোহানের ফেরা
পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সোহানের এবারের বাড়ি থেকে দূরে আসার যাত্রাটাও বিশেষ, প্রায় চার বছরের বেশি সময় পর জাতীয় দলে ঢুকে দলের সাথে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছেন সোহান, সেখানে সিরিজ জিতে ফিরেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের একটা স্মরণীয় জয়ে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
ব্যাট হাতে একটা ম্যাচে জিতিয়েছেন শেষ পর্যন্ত মাথা ঠান্ডা রেখে, মিচেল স্টার্কদের বল বুঝে শুনে গ্যাপ বের করে রান তুলে সেই ম্যাচেই সিরিজ জয় অনেকটা নিশ্চিত হয় সোহান–আফিফের ব্যাটে।
সোহান অবশ্য খেলা নিয়ে ততটা চিন্তিত নন, তিনি বলেন একটা সময় ছিল যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলা ছিল চাপের, যে দলে টিকতেই হবে এমন। এখন আমি প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করে খেলি।
এবারের সিরিজে বাংলাদেশের অন্যতম ইতিবাচক দিকগুলোর একটা ছিল সোহানের উইকেট কিপিং, উইকেটের পেছনে সোহানের দক্ষতা অনুভব করেছে বোলিং ইউনিটও।
এমনকি তৃতীয় টি টোয়েন্টি ম্যাচে ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজের যে ওভারে মাত্র এক রান হয়, সেই ওভারে সোহান দারুণ কিপিং করে উইকেটের পেছনে রান বাঁচান।
স্পিন বোলিং যেসব দলের শক্তি সেখানে উইকেটকিপিং একটা বড় দক্ষতার জায়গা।
সোহানের অনুপ্রেরণা এক্ষেত্রে ভারতের কিংবদন্তী সাবেক অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি।
তবে তিনি বলেন, মুশফিকুর রহিমের সাথে তার কিপিং নিয়ে নিয়মিত কথা হয়।
নুরুল হাসান সোহানের অভিষেক হয় খুলনাতেই, খুলনা জেলা স্কুলে পড়া সোহানকে নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মধ্যে বেশ চর্চা হয় খুলনা শহরের ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে, বিশেষত তরুণ যারা।
সূত্র : বিবিসি বাংলা