রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সময় থেকেই যে আশঙ্কাটি দেশবাসী করেছিল তা যেন নির্মম সত্য হয়ে উঠছে। অপরাধপ্রবণ বলে কুখ্যাতি রয়েছে রোহিঙ্গাদের। ফলে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা যখন একযোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং সরকার তাদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখনই অনেকে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গারা দেশের জন্য গলার কাঁটা হবে বলে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নিজেদের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে এইসব এলাকার পাহাড়, বনভূমি উজাড় করে এবং হাজার হাজার গাছ কেটে এসব ক্যাম্প তৈরি হয়েছিল।
অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর সে ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পায়। আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গারা নানা প্রকার সংঘাতে লিপ্ত হয়। যার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রবল আপত্তি। স্থানীয়রা তাদের এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরেরও দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।
দিন যত যেতে থাকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা প্রকার অসামাজিক ও সন্ত্রাসী কাজ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের মতো কাজেও লিপ্ত হয়ে পড়ে। মারামারি দলাদলি তাদের নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তাদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
উখিয়ার কুতুপালংয়ের বনে গড়ে তোলা লম্বাশিয়া ক্যাম্পের সশস্ত্র মুন্না গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড গিয়াসউদ্দিনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে।
এ সময় তাকে বাঁচাতে গেলে তার মাÑবাবাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মুন্না গ্রুপবিরোধী রোহিঙ্গারা মুন্না গ্রুপের আরেকজনকে জবাই করে হত্যা করে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে র্যাবÑ১৫ ৯ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্রও উদ্ধার করে র্যাব।
এসব ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘটনার আগে শনিবার রাতে মধুরছড়া জঙ্গলে অস্ত্র তৈরির কারখানা ও দুজন কারিগরকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এসব ঘটনায় স্থানীয়রা চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রোহিঙ্গা সংকট যে একটি দীর্ঘমেয়াদী সংকটে পরিণত হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ ইস্যুটি এখন আন্তর্জাতিক মহলে খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। করোনা পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় এই ইস্যুটি কতটা গুরুত্ব পাবে তা ভাববার বিষয়। পরস্পর বৈরি দুটি দেশ ভারত ও চীন তাদের স্বার্থের বাইরে বাংলাদেশের জন্য কতটুকু করবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আরও দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে রাখতে হতে পারে। তাই রোহিঙ্গা এবং সে সঙ্গে স্থানীয়দের স্বার্থে ক্যাম্পে পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। এখন থেকে কঠোর অবস্থানে না গেলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরণের আপদ হয়ে উঠতে পারে।
মতামত সম্পাদকীয়