নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »
বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব জঙ্গল চাম্বল গ্রামের একটি পাহাড়ে একটি অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব-৭। এ সময় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় র্যাব-৭ এর কার্যালয়ে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, মঙ্গলবার র্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে পাহাড়ের উপর নির্মিত টিনের দোচালা ঘরের অস্ত্র কারখানা থেকে সাদা প্লাস্টিকের বস্তা হতে দেশের তৈরি ৮টি ওয়ান শুটারগান, ২টি টু-টু পিস্তল এবং অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য তার, গ্রাইন্ডার মেশিন, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুরি, রড কাটার, বাটালসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রসহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করে। ওই অস্ত্র কারখানা থেকে ওই গ্রামের মৌলভী নুরুল হুদার ছেলে জাকের উল্লাহ (৫০) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে র্যাব বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করেন।
বুধবার দুপুর ১২টায় র্যাব-৭ এর কার্যালয়ে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ প্রেস ব্রিফিং এ বলেন, মঙ্গলবার বেলা ২টা ৪০ মিনিটে অস্ত্র তৈরির কারখানাটির সন্ধান পাওয়া যায়। র্যাবের কাছে তথ্য ছিল কতিপয় ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গল চাম্বল এলাকায় অস্ত্রের কারখানা স্থাপন করে অস্ত্র তৈরি করে স্থানীয় জলদস্যু, মাদকব্যবসায়ী এবং ডাকাত দলের সদস্যদের কাছে বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭ এর ১টি অভিযানিক দল দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা তৎপরতা চালাতে থাকে। এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং অপরিচিত কাউকে দেখলেই এই অস্ত্র তৈরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যগণ সতর্ক হয়ে তাদের অবস্থান ঘন ঘন পরিবর্তন করায় সনাক্তকরণ ছিল কঠিন বিষয়। র্যাব-৭ এর গোয়েন্দা তৎপরতা ও পাহাড়ি এলাকার ভিতর দিয়ে বিশেষ কৌশলে এলাকায় প্রবেশ করায় এই চক্রের সদস্যরা টের পায়নি। পরে কারখানার অবস্থান নিশ্চিত হলে সেখানে র্যাব-৭ এর অধিনায়কের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে এবং একটি টিনের বাড়ি থেকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ ১০টি প্রস্তুতকৃত অস্ত্রসহ একজন মূল কারিগরকে আটক করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকের উল্লাহ স্বীকার করেছে দীর্ঘদিন ধরে সে এই কাজের সাথে জড়িত। ১টি অস্ত্র তৈরির জন্য তারা অস্ত্রের ক্যাটাগরি ভেদে ১০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য ধরে থাকে এবং ছোট ওয়ানশুটার গান প্রস্তুত করতে ৫-৬ দিন সময় নিয়ে থাকে। তবে স্থানীয় সূত্রমতে ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী আটককৃত জাকের উল্লাহ ৭-৮ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত। সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের দৃষ্টি এড়াতে মাঝে মাঝে লোক দেখানো কৃষি কাজ করতো। জাকের উল্লাহ আরো জানায় তারা মূলত ২ জন কারিগর মিলে অস্ত্র তৈরি সম্পূর্ণ কাজটি করতো। অস্ত্রের প্রকারভেদে তাদের ন্যূনতম ৫-১৫ দিন সময় লাগতো একটি অস্ত্র প্রস্তুত করতে। অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল তারা স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করে এই ভাড়া করা বাড়িটিতে নিয়ে এসে কাজ করতো। প্রধান কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও লোহার টুকরা তারা ক্রয় করে। পরবর্তীতে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে অস্ত্রের সকল যন্ত্রাংশ এই কারখানাতেই প্রস্তুত করতে সক্ষম ছিল। যন্ত্রসমূহ পরিচালনার জন্য দূরের আরেকটি বাড়ি থেকে তারা তারের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিত।
বুধবার দুপুরে জাকের উল্লাহ’র বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, জাকের উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা সমাবেশের মিছিলে তার অবস্থান ছিল। জাকের উল্লাহ যে অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত গ্রামের কেউ জানতো না।
জাকের উল্লাহ’র স্ত্রী জো¯œা আক্তার বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় কিছু লোক বাড়ি ঘেরাও করে। স্বামী জাকের উল্লাহকে ঘুম থেকে তুলে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। সবাই চেচামেচি শুরু করলে ওই লোকজন র্যাব পরিচয় দেন। পাহাড়ের ভিতর একটি ঘর দেখিয়ে দিতে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানায়। এরপর জানতে পারলাম স্বামীকে র্যাব অস্ত্রসহ ধরেছে। প্রতিবেশী শের আলী এর আগেও জায়গা জমির বিরোধ নিয়ে নিজ মেয়েকে বাদি করে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করিয়েছে। ওই শের আলীই এসব ষড়যন্ত্র করছে। ধর্ষণ মামলায় তিনি জামিনে আছেন। প্রকৃতভাবে তদন্ত করে ন্যায্য বিচার চাই।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে র্যাব বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।