কয়েকদিনের মধ্যে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে : প্রকল্প পরিচালক
রোডটি চালু হলে শহরের ভেতরে যানবাহনের চাপ কমবে : ডিসি ট্রাফিক
ভূঁইয়া নজরুল :
পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে। কিন্তু রাসমনি ঘাট থেকে ফৌজদারহাটের দিকে টোল রোডের সাথে যুক্ত হতে প্রায় এক কিলোমিটার রোডটি শেষ হয়েও শেষ হচ্ছিল না। আর এতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি প্রায় অকেজো হয়েছিল। অবশেষে সেই অংশটি পিচঢালাই চলছে, কয়েকদিনের মধ্যে তা গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাটের উত্তর দিকে যে পয়েন্টে টোল রোডের সাথে আউটার রিং রোডটি যুক্ত হবে সেখানে পিচঢালাইয়ের কাজ চলছে। টোল রোড থেকে গাড়ি যাতে রিং রোডে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য পাথরের বোল্ডার দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে।
কবে নাগাদ তা উন্মুক্ত করে দেয়া হবে জানতে চাইলে আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে কিছুটা সময় নিলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছুদিনের মধ্যেই গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেবো। এতে করে গাড়ি সহজে টোল রোড থেকে রিং রোডে প্রবেশ করে পতেঙ্গা পর্যন্ত চলে যেতে পারবে।’
এদিকে রিং রোডটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত পুরো রোডের কাজ প্রায় শেষ। তবে অনেক জায়গায় রোড মার্কিং, বৈদ্যুতিক পোল বসানোর কাজ বাকি রয়েছে। এছাড়া সাগরের ভেতরের অংশে ব্লক বসানোর কাজও বাকি রয়েছে। কিন্তু রাস্তার কাজ প্রায় শেষ। এখন টোল রোডের সাথে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য প্রায় এক কিলোমিটার অংশটি উন্মুক্ত করে দিলে সহজে গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে। এই পয়েন্টে যুক্ত হওয়া ছাড়া হালিশহর আর্টিলারি পয়েন্টে কাঁচা রাস্তা দিয়ে রিং রোডে উঠা ও নামার একটি বিকল্প রয়েছে। এতোদিন এই অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করতো।
অপরদিকে টোল রোড পরিচালনা করে থাকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, ‘রিং রোডটি চালু হলে দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় আমাদের টোল রোডের সাথে যুক্ত হওয়া গাড়িগুলো ফৌজদারহাটে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের সাথে মিশতে পারবে। একইসাথে ঢাকা থেকে আসা গাড়িগুলো টোল রোড ও রিং রোড হয়ে পতেঙ্গা পর্যন্ত চলে যেতে পারবে। এতে শহরের ভেতরে গাড়ির চাপ কমবে। তবে ফৌজদারহাট থেকে দক্ষিণ কাট্টলী পর্যন্ত চার কিলোমিটার অংশে যানবাহনের চাপ বাড়বে।’
সাগরপাড়ের আউটার রিং রোডটি চালু হলে শহরের ভেতরের যানজট অনেকাংশে কমে আসবে বলে জানান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হওয়ার আগে রিং রোড, পোর্ট কানেকটিং রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের কাজ শেষ করার জন্য গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার বিষয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এসব প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও সঠিকভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এখন রিং রোডটি চালু হলে পতেঙ্গা এলাকার মানুষ বিকল্প রোড হিসেবে রিং রোড ব্যবহার করতে পারবে।
একই মন্তব্য করেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘রিং রোডটি চালু হলে পতেঙ্গা এলাকার যানবাহনগুলো বিশেষ করে ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যানগুলো যাতায়াত করতে পারবে। আর তা করা গেলে নিমতলা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সড়কে ভারী যানবাহনের চাপ কমবে।
উল্লেখ্য, পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম চার লেনের সড়কটি গত জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে তা সংশোধন করে প্রকল্পের সময় আরো এক বছর বাড়ানো হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উঁচু এই সড়কের সাথে নগরীর রোড নেটওয়ার্কের সাথে তিনটি পয়েন্টে যুক্ত হওয়ার কথা। ফিডার রোড-১ (পতেঙ্গা স্টিলমিল এলাকায় নারিকেলতলা দিয়ে বেড়িবাঁধে), ফিডার রোড-২ (বড়পোল আনন্দবাজার হয়ে বেড়িবাঁধে) এবং ফিডার রোড-৩ (সাগরিকা হয়ে বেড়িবাঁধে)। এরমধ্যে ফিডার রোড-২ বাতিল হয়ে যায় এবং ফিডার রোড-১ অগ্রগতি নেই, ফিডার রোড-৩ এগিয়ে চলছে।