অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণ

অস্বাস্থ্যকর খাবার

মঙ্গলবার একটি দৈনিকের উদ্যোগে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ‘অস্বাস্থ্যকর খাবারের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। বিষয়টি জনজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও বহুল আলোচিত নয় বলে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আমরা জানি বর্তমানে দেশে কোনো খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে একদিকে মানহীন খাবার অন্যদিকে ভেজাল, বাসী, অস্বাস্থ্যকর খাবারের ছড়াছড়ি। নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভোক্তারা এসব খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন।
বৈঠকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের ৬২ শতাংশ শিশু অস্বাস্থ্যকর খাবার খায়। খাবারের কারণে প্রায় সব বয়সী মানুষের মধ্যে অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সব পক্ষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা জরুরি। সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (পুষ্টি) ফারিয়া শবনম বলেন, দেশের ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ শিশুকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো হয়। ১৮ থেকে ৬৯ বছর বয়সী ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ খাবারের সময় বাড়তি লবণ খান। একই বয়সী প্রায় ৩৫ শতাংশ নারী ও ২৩ শতাংশ পুরুষের ওজন অতিরিক্ত। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৫ জনে ১ জন ডায়াবেটিসে ও ১০ জনে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সেসের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, খাদ্যের দাম ও মানুষের আর্থিক সংগতির সঙ্গে মানুষের নিয়মিত খাবারের সম্পর্ক আছে। ২০২০ সালে দেখা গিয়েছিল প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার খাওয়ার সংগতি আছে ৪১ শতাংশ পরিবারের। ২০২৪ সালে এ হার কমে দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশে। অর্থাৎ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, অস্বাস্থ্যকর খাবারকে ‘রিফরমুলেশন’ করে স্বাস্থ্যকর খাবারে পরিণত করা যায় এবং তা করতে হবে। তবে মানুষের স্বভাবে বা অভ্যাসে পরিবর্তন করা কঠিন। ক্ষতিকর জেনে মানুষ লবণ কম খেতে রাজি আছে, কিন্তু চিনির ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না।
বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক খাদ্য নির্দেশিকা তৈরি করা জরুরি। বাংলা ভাষায় তৈরি করা এসব নির্দেশিকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যানটিনের জন্য নির্দেশিকা বানাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথা ক্যানটিন কোন ধরনের খাবার দিচ্ছে, তা তদারকির দায়িত্ব দিতে হবে সিটি করপোরেশনকে। স্বাস্থ্যকর খাবারের বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে বলা হয়, স্কুলে ও স্কুলের আশপাশে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বিক্রি এবং গণমাধ্যমে এসবের প্রচার-প্রচারণা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।

অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার কেন ক্ষতিকর, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা দরকার বলে মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সেসের অধ্যাপক খালেদা ইসলাম। তিনি বলেন, মায়ের বুকের দুধ মানুষকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থেকে সুরক্ষা দেয়—এই প্রচার বাড়ানোর এবং জন্মের পরপরই মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ১০০ শতাংশে উন্নীত করার উদ্যোগ দরকার।

দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করার কাজটি সবচেয়ে জরুরি। কাজেই সরকারকে এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যে করেই হোক একটি সুস্থ জাতি গড়তে হলে সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে আগে।