অপহরণের চারদিন পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেল ৮ জন

টেকনাফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার জাহাজপুরা এলাকা থেকে অপহরণের চার দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছে স্কুল ছাত্রসহ আটজন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে ছয় লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে জিম্মিদশা থেকে ছাড়া পান তারা।

ফেরত আসা অপহৃতরা হলেন জাহাজপুরা এলাকার বাসিন্দা রশিদ আহামদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল, মমতাজ মিয়ার ছেলে মো. রিদুয়ান, রুস্তম আলীর ছেলে সেলিম উল্লাহ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে করিম উল্লাহ, কাদের হোসনের ছেলে নুরুল হক ও নুর মোহাম্মদ এবং রশিদ আহমদের ছেলে আবছার।

এদিন রাতেই পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। পরে ভোর ৪টার দিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। টেকনাফ মডেল থানার ওসি আবদুল হালিম তাদের ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে মুক্তিপণের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান ওসি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিক জানান, রাত ২টার দিকে মুক্তিপণ নিয়ে ফেরার শর্তে প্রথমে ছয়জনকে বাড়িতে পাঠায় অপহরণকারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ছয়জন এলাকায় এসে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে পাহাড়ে গেলে বাকি দুজনকেও ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে রাত ৩টার দিকে পুলিশের একটি টিম এসে সবাইকে থানায় নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অপরাধের বিষয়ে বারবার অভিযোগ করে আসছি, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার ফলে অপহরণের মতো অপরাধ ঘটেই যাচ্ছে।’

এদিকে, আটজনকে অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। অপহৃত কলিমুল্লাহর ভাই হাবিবউল্লাহ বাদি হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি করেছেন।

বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হুমায়ুন ইসলাম বলেন, ‘জাহাজপুরা থেকে অপহৃত মোস্তফা ছাড়া বাকিরা সবাই দিনমজুর। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা সুযোগ পেলেই এলাকায় এসে লোকজনকে অপহরণ করে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ জনপদের মানুষ এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। মুক্তিপণ না দেওয়ায় গত বছর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদুল করিম নামে একজনকে হত্যা করা হয়েছিল।’

টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, ‘অপহৃতরা এলাকায় এসেছে জানার পরপরই তাদের থানায় নিয়ে আসার পর প্রাথমিক সেবা দেওয়া হয়েছে।’

অপহরণের শিকার ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের পাহাড়িছড়ার ভেতর বেঁধে রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।’ অপহৃতদের নিয়ে পাহাড়ের এলাকা ঘুরে আসার কথা জানিয়েছেন ওসি।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘অপহরণ হওয়ার পর থেকে স্থানীয়দের উদ্ধারে আমরা ড্রোন উড়িয়ে অপহরণকারীদের শনাক্তসহ উদ্ধারে চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। হয়তো ভয়ে অপহরণকারীরা তাদের ছেড়ে দিয়েছে। এর পেছনে যারাই জড়িত থাকুক, কেউ রেহাই পাবে না।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড জাহাজপুড়া পাহাড়ের ভেতর পানিরছড়া থেকে আটজনকে অপহরণ করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।