নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরের কেন্দ্রে বিস্তৃত রয়েছে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার। সাড়ে ছয় কিলোমিটারের এই ফ্লাইওভারটি নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকতা এনেছে। তবে অপর্যাপ্ত র্যাম্পের কারণে সুফল মিলছে না বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, মুরাদপুর এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনে থেকে শুরু হয়ে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পশ্চিম গেটের সামনে দিয়ে লালখানবাজারে এসে নেমেছে এই ফ্লাইওভারটি। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন পাওয়ার পর ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাঙ্কন (জেভি)’র মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১৮ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। ফ্লাইওভারটির মূল অবকাঠামো তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা এবং র্যাম্প ও লুপ তৈরির কাজে ২৪৬ কোটি টাকা।
ফ্লাইওভারটিতে চলাচল করা একজন মোটর সাইকেল আরোহী বলেন, ‘ফ্লাইওভারটি হওয়ায় দুই নাম্বার গেট এলাকার যানজট বা সিগন্যাল নিয়ে আর ভাবতে হয় না। অল্প সময়ে খুব সহজে মুরাদপুর থেকে জিইসির র্যাম্প দিয়ে নেমে নিয়মিত অফিস করি। এটা নিয়ে নানাজনের নানা কথা আমরাও শুনি। কিন্তু আমি সুবিধা পাই, তাই ওসব নিয়ে আমি ভাবি না।’
স্যানমার শপিং মলের সামনের একজন সিএনজি চালক বলেন, ‘আমরা তো সব সময় ডিরেক্ট যাতায়াত করি। রাস্তা যেদিকে খালি পাই, সেখানেই চালাই। ফ্লাইওভার হওয়াতে আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। তবে ওঠা-নামার লুপ আরও বেশি থাকলে আমাদের জন্য বেশি সুবিধা হতো।’
একই বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উত্তর জোনের পরিদর্শক (প্রশাসন) কামাল হোসেন বলেন, ‘ফ্লাইওভারের সুফল পেতে সবাইকে যাতায়াতে নির্ভর করতে হবে। ফ্লাইওভারের কারণে নিচের রাস্তাগুলো যেহেতু ছোট হয়েছে, সেহেতু নিচে ও ওপরে চলাচল করার মতো গাড়িগুলোর ডিরেকশন ঠিক করাটা জরুরি। বিশেষ করে অযান্ত্রিক গাড়িগুলোর জন্য নিচে আলাদা লাইন করা দরকার। তাই ফ্লাইওভারের র্যাম্প বাড়ানোটা জরুরি।’
র্যাম্প বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভারগুলো কারা ব্যবহার করবে, এই ডিরেকশনটা ঠিক করে তারপরই তো তা করা হয়েছে। ফলে বাস বা গণপরিবহনগুলো ফ্লাইওভারে ওঠে না। কিন্তু প্রাইভেট কার ও মাইক্রোগুলো অর্থাৎ ব্যক্তিগত গাড়িগুলো পর্যাপ্ত র্যাম্প না থাকায় ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করছে না। যেমন ধরেন-কেউ মুরাদপুর থেকে যদি দুই নাম্বার গেট এলাকার যানজট এড়িয়ে নাসিরাবাদ অর্থাৎ ফিনলে স্কয়ার এলাকায় যেতে চায়, তা সম্ভব নয়।’
ফ্লাইওভারের উপযোগিতা প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ আবু সুফিয়ান কুশলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভারও তো সড়ক। যান চলাচলের চাহিদা বিবেচনায় করেই যে কোনো সড়ক নির্মিত হয়। আর সড়কগুলো যখন আর এক্সট্যান্ড করার সুযোগ থাকে না তখন বিকল্প হিসেবে অন্ডারপাস-ওভারপাস এবং ফ্লাইওভার করা হয়। আর ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় পুরো সার্ভিস এরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সেখানে র্যাম্প ব্যবস্থা করলে এর উপযোগিতা বাড়ে। এতে নগরের যানজট নিয়ন্ত্রণে আসার পাশাপাশি সড়ক চলাচলও নিরাপদ হয়।’
প্রসঙ্গত, গাড়ি চলাচলের সুবিধার্থে ফ্লাইওভারে ৬টি র্যাম্প নির্মিত হওয়ার কথা ছিলো। এরমধ্যে ফ্লাইওভারের জিইসি মোড়ে ৪টি র্যাম্প হওয়ার কথা। সেখানে ওয়াসা থেকে জিইসি মোড়ের দিকের গাড়িগুলো জিইসি কনভেনশনের সামনে, মুরাদপুরের দিকে যাওয়া গাড়িগুলো ইফকো কমপ্লেক্সের সামনে, মুরাদপুর থেকে জিইসি মোড়ের দিকের গাড়িগুলো মেরিডিয়ানের সামনে এবং ওয়াসার দিকে যাওয়া গাড়িগুলো ব্লুজম গার্ডেনের সামনে থেকে ওঠার কথা। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় নির্মিত হয়নি জিইসি মোড় এলাকার দুইটি র্যাম্প। এছাড়া ষোলশহর দুই নম্বর গেটে বায়েজিদ বোস্তামী রোডের দিকে দুটি লুপ আছে। একটি লুপ দিয়ে গাড়ি যেতে পারে এবং অপরটি দিয়ে গাড়ি আসতে পারে।