ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন ২৬ ঘণ্টা পর পুরোপুরি নিভেছে। শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুন নেভাতে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি কাজ করে। প্রায় সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দর চালু হয়। আগুন নেভাতে এত দীর্ঘ সময় কেন লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যবসায়ী ও ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে গণমাধ্যমকে বলেছেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় এক ঘণ্টার বেশি সময় তাঁরা বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো কমপ্লেক্স ভবনে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, অগ্নিনির্বাপণের জন্য বিমানবন্দরের ভেতরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তিনটি ইউনিট রয়েছে। সেই ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে এলেও আগুন নেভাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা আলছেন, বিমানবন্দর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। তাই বলে আগুন নেভাতে ভেতরে প্রবেশের জন্য এক ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করতে হবে? ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে যদি আটকে রাখা না হতো, তাহলে আগুনে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
এর আগে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকার কারখানায় লাগা আগুন প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আগের দিন বেলা ২টায় সিইপিজেডের সাততলা কারখানা ভবনটিতে আগুন লাগে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর মিরপুর রূপনগর শিয়ালবাড়ী এলাকায় প্রিন্টিং কারখানা এবং কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে। এই আগুনে ১৬ জন পুড়ে মারা যান।
এদিকে চট্টগ্রামে আগুন লাগা আটতলা ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যানের (অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা) আবেদন করা হয়েছে কেবল। তবে নিয়ম অনুযায়ী এখনো পরিদর্শন হয়নি। তার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।’ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ভবনের দুই পাশ দিয়ে আগুন নেভানোর সুযোগ ছিল না। অন্য দুই পাশ থেকে চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ভবনের আশপাশে যে ন্যূনতম জায়গা রাখতে হয়, সেটি দুই দিকে ছিল না।
একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্যটি ইপিজেড যা বিশেষ একটি অঞ্চল। সেখানে যদি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার এই হাল হয় তাহলে দেশের অন্যান্য স্থানের চিত্র সহজে অনুমেয়। এ দুটি ঘটনায় প্রাণহানি না ঘটলেও তাতে দেশের ভাবমূর্তির ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। বিদেশিরা আমাদের বিমানবন্দর ও বিশেষ শিল্পাঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করবে। আমরা প্রশ্ন করতে চাই আর কত অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশাসনের টনক নড়বে?