মোখতারুল ইসলাম মিলন »
বাংলাদেশের ঋতুগুলোর মধ্যে হেমন্তকাল একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এটি বাংলা ক্যালেন্ডারের কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে পড়ে, অর্থাৎ অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত। হেমন্ত আসলে একটি পরিবর্তনের সময়, যখন প্রকৃতিতে শীতলতা এবং শান্তির ছোঁয়া লাগে। এই সময়টি ফসলের মৌসুমের সঙ্গেও জড়িত, যা কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
হেমন্তকালে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন ঘটে। গ্রীষ্মের তাপ থেকে মুক্তি পেয়ে ঠান্ডা হাওয়া প্রবাহিত হতে শুরু করে। চারপাশের পরিবেশে এক ধরনের শান্তি বিরাজ করে। গাছের পাতা হলুদ ও সোনালী রঙে রঞ্জিত হয় এবং মাঠে ধানের সোনালী বর্ণ প্রকৃতির গ্রীন কার্পেটের মত দেখা যায়। হেমন্তের সূর্যের আলো কোমল ও উষ্ণ, যা প্রতিটি প্রানী ও উদ্ভিদকে প্রাণিত করে। হেমন্তকাল নিয়ে কবিদের অনেক কবিতা রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কাব্যে লিখেছেন ‘হেমন্তের হাওয়া এল, মধুর সুরে বেজে উঠল গান, বালিকার হাসি, কৃষকের কপালে সোনালী ধান।’
গ্রামবাংলার জীবনে হেমন্তকাল বিশেষ উৎসবের সময়। এই সময় বিভিন্ন ধরনের পিঠে-পুলি তৈরি করা হয়, এবং গ্রামের মানুষেরা একত্রিত হয়ে উৎসব পালন করে। হেমন্তের মেলা, গান-বাজনা, আর সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আমাদের ঐতিহ্যকে নতুন করে উদ্ভাসিত করে। গ্রামের রাস্তায় মেলা বসে, যেখানে লোকজ সংস্কৃতির প্রাণবন্ত চিত্র দেখা যায়। হেমন্তের সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে বসে থাকা, ঠান্ডা বাতাসের স্রোতে শরীরকে স্নিগ্ধ অনুভব করা একটি আলাদা আনন্দ দেয়। পাখিদের কূজন এবং নদীর পানির শব্দ আমাদের মনে শান্তি এনে দেয়। এই সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ আসে, যা সম্পর্ককে আরো গভীর করে। হেমন্তকাল আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মানবজীবনের সঙ্গম। হেমন্তের স্বাদ আমাদের মনে নতুন আশা এবং আনন্দের সঞ্চার করে। প্রকৃতির এই অপূর্ব ঋতু আমাদের শেখায়, কিভাবে আমরা জীবনের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারি এবং প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে পারি।
সার্বিকভাবে, হেমন্তকাল আমাদের মনে এক অপরূপ অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে নতুন রঙ নিয়ে আসে। এই ঋতু আমাদের জানান দেয়, জীবনের প্রতিটি পরিবর্তনই একটি নতুন সুযোগ, যা আমাদের আনন্দ এবং সৃষ্টির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।