অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ঈদ, স্বস্তির ঈদ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

রমজান মাসে ছিল না দ্রব্যমূল্যের জন্য হাহাকার, ঈদের কেনাকাটায় স্বস্তি, ঘরমুখো লাখো মানুষের সড়কে নিরাপদ ও স্বস্তির যাত্রা, ঈদের দিনও কেটেছে আনন্দ-উৎসবে। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সব মিলে এবার অন্যরকম এক স্বস্তির ঈদ পার করছেন দেশবাসী।

জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে বেছে নেয় ছাত্র-জনতার নেতৃত্ব। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর সরকার দায়িত্ব নিয়ে ছাত্র-জনতার দাবিগুলোর বাস্তবায়ন করা শুরু করে। ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম, সব ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, সড়ক ও বাজার পরিস্থিতি মনিটর, সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা, এসব উদ্যোগ জনগণকে স্বস্তির মধ্যে রেখেছে।  রমজানজুড়ে বাজার পরিস্থিতি ছিল বিগত বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখ করার মতো। এবারের রজমানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের মধ্যে হাহাকার ছিল না। রমজানের আগে থেকে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা, শীতের সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির সময়ে রমজান চলে আসা, অতি মুনাফার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার মতো বিষয়গুলো রমজানে স্বস্তি দিয়েছে। যদিও কৃষক পর্যায়ে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম নিয়ে কিছু অস্বস্তি ছিল।

এবারের ঈদে সড়ক, রেলপথ এবং নৌপথে যাত্রা পরিস্থিতি অনেক স্বস্তি ছিল। দীর্ঘ ছুটিতে পর্যায়ক্রমে মানুষের বাড়ি ফেরা, বৃষ্টি না থাকায় সড়কে যান চলাচল ঠিক থাকার মতো বিষয়গুলো ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিয়েছে। পাশাপাশি সড়ক মনিটরিং কার্যক্রম স্বস্তির মাত্রা বাড়িয়েছে। কোথাও কোথাও সেনা বাহিনীর সদস্যরা সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করায় আরও স্বস্তি মিলেছে সড়কে। আর ট্রেনে ঈদযাত্রাও দীর্ঘ ছুটির কারণে মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছেন। ট্রেনের সিডিউলগুলোও ঠিক ছিল। বিপুল সংখ্যক মানুষ নৌপথে বাড়ি ফিরলেও তাদের তেমন বিড়ম্বনা ছিল না।

কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া রমজান এবং ঈদে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল। ঈদের সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের উদ্বেগ ছিল না। পুলিশ-র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ঈদের জামাত এবং ঈদের দিন স্বস্তি দিয়েছে।

এবার ঢাকায় আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে প্রথমবার ঈদের বড় একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটির উদ্যোগে এই জামাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। নামাজের পর ঈদের আনন্দ র‌্যালি এবং মেলার আয়োজন করা হয়। র‌্যালিতে সুলতানী এবং মুঘল আমলের ঐতিহ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় ঈদগাহ, বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ঈদের দিন রাজধানীবাসীর মধ্যে ছিল উল্লাস। ছিল না কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। নামাজ শেষে আগারগাঁওয়ে ঈদের র‌্যালি, বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় ছিল বেশি। বিনোদনকেন্দ্রে বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করেছেন। বেশিরভাগ উপদেষ্টা ঢাকায় ঈদ করেছেন। ঈদের নামাজ শেষে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঈদগাহে মুসল্লিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এতে সাধারণ মানুষজন তাকে সমর্থন জানিয়ে তার মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ করার দাবি তোলেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নানা শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বলেন, আজকের দিন আমরা প্রতিদিন স্মরণ করি। আমরা দেশে শান্তি চাই, যাতে মানুষ নিজ মনে নিজের আগ্রহে চলতে পারে। কারো ভয়ে, ভীত হয়ে তাকে চলতে না হয়। আমরা সবাই সবার মঙ্গল কামনা করি। আমরা জাতির জন্য শান্তি চাই এবং সারা পৃথিবীর জন্য শান্তি চাই।