অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরেরও অধিক শাসনের অবসানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হলো। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই যাত্রায় উপদেষ্টা হিসেবে তার সঙ্গে থাকছেন আরো ১৬ জন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান।
উপদেষ্টারা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, লেখক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, কলামিস্ট অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা -উবিনীগ-এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর আ ফ ম খালিদ হোসেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায়। ঢাকার বাইরে থাকায় তিনজন উপদেষ্টা পরে শপথ নেবেন।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ একমাসের আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করলে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উঠে আসে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে। একজন নোবেলজয়ী ও গরিবের অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিশ্বজুড়ে ড. ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতা আছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম দুজন শিক্ষার্থী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন যারা আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠ থেকেই বঙ্গভবনে শপথ নিতে গেলেন।
একটি রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের পর একটি বহু কাঙ্ক্ষিত অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলো যখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, খুন ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ চলছে। চলছে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, মন্দিরে ভাঙচুর। কাজেই আমরা মনে করি নতুন সরকারের প্রথম কাজটি হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন করা। জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। গতকাল দুপুরে ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে ড. ইউনূস দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। শপথ নেওয়ার পরে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাও প্রথমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েয়েছেন।
সে সঙ্গে আমরা আশা করব, দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আগে আমাদের এই সরকার কিছু সংস্কারমূলক কাজ করবে যাতে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত হয়। দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দূর করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেবে। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার পথ সুগম করার পাশাপাশি দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবে। শুধু নির্বাচন বড় কথা নয়। বড় কথা হলো রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আগে শক্তিশালী করতে হবে। তারজন্য সময়ের দরকার হলেও তাই করা উচিত। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে যেন রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ ও লক্ষ্য বদলে না যায় সে ব্যবস্থাও সুনিশ্চিত করতে হবে। কাজেই যেভাবেই হোক অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল হতে হবে। তারজন্য জনগণকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে।