নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়া নান্দনিক আরো একটি দ্বীপ। দ্বীপের মধ্যে দ্বীপ যেন কৌতূহলের শেষ নেই। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর অনিন্দ্যসুন্দর দ্বীপটিকে ভার্জিন দ্বীপ নামেও ডাকা হয়। জেলার উত্তর-পশ্চিম ও মহেশখালী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষেই সোনাদিয়ার অবস্থান।
জানা গেছে, এক সময় সোনাদিয়া দ্বীপটি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। খুন, মারামারি, ডাকাতি ও মাদক বিক্রি হতো। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক’টি বড় অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর দ্বীপে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। তবে এখনো সেই দ্বীপে রাত্রিযাপন নিরাপদ নয়।
কিন্তু অনিরাপদ এ দ্বীপেই কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লোভনীয় অফার দিয়ে আনছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। এসব পর্যটকদের বেশির ভাগ দল রাত্রিযাপনের নামে সেখানে বসায় মাদকের আসর। সমুদ্র সৈকতের তীরে আগুন জ্বালিয়ে মদ, ইয়াবা ও গাজা সেবনের পর উলঙ্গ উল্লাস করে। আর এসবে নিরাপত্তা দেয় কটেজ মালিকরা।
মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ২১ ডিসেম্বর রাতে একদল পর্যটক বিদেশি মদের আসর বসায় সোনাদিয়া পশ্চিম পাড়া সমুদ্র তীরে। ওই সময় তিনি মাদক সেবনের একটি ছবিও গোপনে ধারণ করেন।
এদিকে গত তিন বছর ধরে তাঁবুতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করছেন স্থানীয় কিছু মানুষ। কিন্তু ইদানিং সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণে প্যাকেজ সিস্টেম চালু করে বিজ্ঞাপন প্রচারের পর বিষয়টি সামনে আসে। তখন জনমনে প্রশ্ন জাগে ঝুঁকিপূর্ণ দ্বীপে কিভাবে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করছে? আর এসব বিষয়ে প্রশাসনই বা নীরব কেন?
স্থানীয় হাসান মাহমুদ, সিফান, রাকিবসহ কয়েকজন জানান, বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা ভ্রমণের নামে এখানে এসে তাঁবুতে একসাথে রাত কাটায়। তারা আগে বসায় মাদকের আসর।
দ্বীপটির পূর্বের ইতিহাসও তেমন শুভ নয়। নৌপথে যাতায়াত একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতাও তেমন নেই। যার দরুণ সেখানে গড়ে উঠেছে কয়েকটি সন্ত্রাসীবাহিনী। যাদের প্রধান কাজ সাগরে দস্যুতা, সাগরপথে মানবপাচার, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে মজুদ রাখা- পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা।
এদিকে দ্বীপে পর্যটকদের হয়রানি ও মাদক সেবনের অভিযোগ এনে দ্বীপে রাত্রিযাপন বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ওসি বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন সোনাদিয়া দ্বীপের ইউপি সদস্য একরাম মিয়া।
এ বিষয়ে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রনব চৌধুরী জানান, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সোনাদিয়া দ্বীপে বহিরাগতদের রাত্রিযাপন ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
অপরদিকে, ১৯৯৯ সালে ঘোষিত ইসিএ এলাকা সোনাদিয়া দ্বীপে আইন অমান্য করে কিভাবে পর্যটন আনা হচ্ছে সেই বিষয়ে কটেজ মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। একই অবস্থা উপজেলা প্রশাসনেও পরিলক্ষিত হয়েছে।
অনুমতি ছাড়া সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ
সোনাদিয়া দ্বীপে তাবু টাঙিয়ে রাত্রিযাপন করেন অনেকে। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে নতুন বছরের শুরুতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রোববার মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলছেন, সোনাদিয়া দ্বীপটি দুর্গম হওয়ায় সেখানে রাত্রিযাপন আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকে দ্বীপে রাত্রিযাপন করছিলেন। তাই ওসি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।