সংবাদপত্র সূত্রে জানা, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের সাতটি পথে অবৈধ অস্ত্রের চালান দেশে ঢুকছে। এই অস্ত্রের কারবারে জড়িত রয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি চক্র। প্রত্যেক চক্রেই রয়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা। অস্ত্রের চালানের প্রধান গন্তব্য কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তিন পার্বত্য জেলার সন্ত্রাসীদের আস্তানা।
সীমান্ত, রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে মায়ানমার থেকে দেশে অস্ত্র চালানের এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমার থেকে যেভাবে অস্ত্র ঢুকছে এ রকম পরিস্থিতি কয়েক বছর আগেও ছিল না। এখন মাদকের সঙ্গেও আনা হচ্ছে অস্ত্র। আবার মানবপাচারকারী চক্রও জড়িয়েছে অস্ত্র কারবারে।
রোহিঙ্গাদের একাংশ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকে মানব পাচারকারীদের শিকার হচ্ছে। খুন, ধর্ষণের ঘটনা একের পর এক ঘটছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ছড়িয়ে পড়ছে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র।
মানবিক সহায়তাও কমছে। কারণ, আন্তর্জাতিক সহায়তা আগের মতো নেই। শিশুদের পড়ানোর অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে হতাশা বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
বিগত আট বছরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে খুন হয়েছেন ২৬৩ জন। এই সময়ে বিভিন্ন অপরাধের ৪ হাজার ৫৪টি মামলায় ৯ হাজার ৩৩ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়। কিন্তু ১৪ লাখ রোহিঙ্গার ভেতর থেকে আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা কঠিন।
আট বছরে মাদকের ২ হাজার ৫৮৯টি মামলায় ৩ হাজার ৯৩৫ জনকে আসামি করা হলেও অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। একই সময়ে অস্ত্রের ৪১৮টি মামলায় ৮৭৩ জনকে আসামি করা হলেও চিহ্নিতদের অনেককে আইনের আওতায় আনা যায়নি।
বিগত দেড় বছরে ৩৮টি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় ৩৪ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়। ৩৭টি অপহরণের মামলায় আসামি করা হয় ৮৯ জনকে। ১৭টি মানব পাচার মামলায় আসামি করা হয় ১৮ জনকে।
গত ৫ অক্টোবর ভোররাতে উখিয়া সীমান্তের পালংখালী ইউনিয়নের মরাগাছতলায় উখিয়া থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুটি অগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচটি কার্তুজ ও দুই হাজার পিস ইয়াবাসহ পাঁচ মাদক কারবারিকে আটক করে। পাচারকারীরা এসব অস্ত্র ও মাদক মায়ানমার সীমান্ত থেকে পাচার করে নিয়ে এসেছিল। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় মায়ানমার থেকে সহজেই অস্ত্র পাচার করা সংশ্লিষ্ট চক্রের সদস্যদের জন্য সহজ হয়ে উঠেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কক্সবাজারের রামু সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, মায়ানমারের অস্ত্র এখানে আনার পর পাচারকারীরা তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
সীমান্তের পয়েন্টগুলোতে বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গত তিন মাসে ২২টির বেশি দেশি-বিদেশি অস্ত্রের চালান আটক করেছেন বিজিবি সদস্যরা। এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগও বেড়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটারের সাতটি পথে পাচারকারীরা অস্ত্র আনছে। এসব পথের পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে—নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি, ঘুমধুম পয়েন্টের বালুখালী কাস্টমস ঘাট ও উখিয়ার পালংখালী এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নলবনিয়া।
আমরা হয়ত এখনও অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছি যে, রোহিঙ্গারা আসলে বাংলাদেশের জন্য কতটা ঝুঁকি হয়ে উঠছে। দেশে তো বটেই এরা আন্তর্জাতিক অপশক্তিরও ক্রীড়নক হয়ে উঠছে ক্রমশঃ। সরকার কঠোর না হলে সম্ভাব্য ভয়ানক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।