করোনায় শিক্ষা ব্যবস্থা
ভূঁইয়া নজরুল :
দেবমাল্য চক্রবর্তী সেন্ট প্লাসিডের ফাদার ফ্রেবিয়ান স্কুলের কেজি শ্রেণীর শিক্ষার্থী। করোনাকালে স্কুলবিহীন বাসায় বন্দিজীবন কাটছে। আর এরই মধ্যে চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া স্কুলের অনলাইন ভিডিও ক্লাস করতে পেরে সে খুব আনন্দিত। দীর্ঘদিন পর ক্লাস শিক্ষকদের দেখতে পেয়ে যেনো নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বিকল্প উপায়ে ক্লাসে ফিরতে পেরে ওর মতো এধরনের অনেক শিক্ষার্থীর ঝিমিয়ে পড়া পড়ালেখায় যেনো গতির সঞ্চার হয়েছে।
শিক্ষকরাও নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। কেউবা বাসায় হোয়াইট বোর্ড স্থাপন করে ক্লাসের আদলে ক্লাস নিয়ে তা ভিডিও করে ফেইসবুকে আপলোড করে পাঠাচ্ছে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে। আবার কেউবা জুম ভিডিও অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি ক্লাস করছেন, আবার কেউবা ক্লাসের বিষয়াদি শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইনে পৌঁছে দিচ্ছে। দূর শিক্ষণের মাধ্যমে কিভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা যায় সেই চেন্তায় মত্ত শিক্ষকরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রাজীব চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের স্কুল থেকে জুম ভিডিও’র মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিচ্ছি। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের মাঝখানে আমাদের প্রশ্ন যেমন করতে পারছে, তেমনিভাবে আমরা উত্তরও দিচ্ছি। নতুন এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।
শুধু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নয়, নগরীর সরকারি স্কুলগুলো ছাড়া বেসরকারি প্রায় সব স্কুলেই চলছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এদের মধ্যে কেউবা ভিডিও আপলোড করছে, আবার কেউবা লাইভ ক্লাস নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন মিসেস তানিয়া পিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে জারিফ ইয়াছার এলিমেন্টারি স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ে। লকডাউন শুরু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই অনলাইনে বিষয় ভত্তিক শিক্ষকরা লাইভ ক্লাস নিচ্ছেন। আমাদেরকে সেই রুটিনও স্কুল থেকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ক্লাস পাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আরো বাড়ছে বলে মনে হয়।’
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এমনও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কোনোদিন ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নেয়নি তারাও এবার প্রতিষ্ঠানের নামে ফেইসবুক খুলে শিক্ষার্থীদের পড়া দিচ্ছে। এবিষয়ে কথা হয় ছোটোদের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট মেরিসের অধ্যক্ষ মেরি সঙ্গীতা বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ফেইসবুক একাউন্ট খুলেছি। সেই পেইজে শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষকদের ক্লাসের ভিডিও আপলোড করে দেয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।’
অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সিলেবাস অনুযায়ী পড়া শেষ করার চেষ্টা করছি। ঈদের ছুটির পর স্কুল খুললে পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। যদি পরীক্ষা নেয়ার কোনো সুযোগ না হয় তাহলে পড়ালেখা যাতে চালিয়ে নেয়া যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি।
অপরদিকে নগরীর অন্যতম প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জয়শ্রী সেন বলেন, আমাদের কিছু শিক্ষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনলাইনে ক্লাস নিলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনো শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করিনি।
তবে এগিয়ে রয়েছে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। নগরীর অন্যতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে প্রতিটি শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও শ্রেণী শিক্ষক দিয়ে একেকটি ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হয়েছে। এই গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব একটি অনলাইন আইডি রয়েছে। সেই আইডিতে কি কি পড়তে হবে তা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জুম ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে লাইভ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শ্রেণী শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ রাখা হয়েছে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।’
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন শিক্ষায় এগিয়ে এলেও নগরীর সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংসদ টেলিভিশনের ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল। এবিষয়ে সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হায়দার হেনরি বলেন, ‘মূলত আমরা সংসদ টেলিভিশন ফলো করতে বলেছি শিক্ষার্থীদের। তারপরও বিষয়ভিত্তিক কিছু ক্লাস আপলোড করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নামে চালু করা ফেইসবুক পেইজে।’
তারপরও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংসদ টেলিভিশনের বাইরে যাচ্ছে না জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক দেবব্রত দাশ বলেন, ‘আমরা সব প্রতিষ্ঠানকে সংসদ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ফলো করতে বলেছি। পরবর্তীতে স্কুল খুললে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে কিংবা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে।’
উল্লেখ্য, করোনার কারণে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে ল-ভ- হয়ে যাচ্ছে দেশের শিক্ষা ক্যালেন্ডার। এই অবস্থায় যে যার অবস্থান থেকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে কাজ করছে।