অধিকাংশের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই

শীতের প্রসাধনীতে বাজার সয়লাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর পরই তাপমাত্রা কমে এসেছে। ভোরে শীতল বাতাস বইছে, মিলছে কুয়াশার দেখাও। তবে আদতে শীতের দেখা মিলবে নভেম্বরের শেষ দিকে। এমনটিই জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা। এদিকে শীত আসার আগেই নতুন নতুন প্রসাধনীতে বাজার সয়লাব। এসব প্রসাধনীর বেশির ভাগই কবে নাগাদ উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে তা লিখা নেই।
গতকাল রোববার নগরীর অন্যতম পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দীন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ময়েশ্চারাইজার, ক্রিম, পেট্রোলিয়াম জেলি, অলিভ অয়েল, বডি লোশন, লিপজেল, গ্লিসারিন, গোলাপজলসহ অসংখ্য প্রসাধনী দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। রয়েছে নামী-দামী সব ব্র্যান্ডের পণ্যও। ১৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে এসব পণ্যের দাম হাঁকানো হচ্ছে। তবে দোকানে সাজিয়ে রাখা সেসব পণ্য দেখে বুঝার উপায় নেই কোনটা নতুন, কোনটা পুরোনো।
নিভিয়া, পন্ডস, গারনিয়ার ভেসলিনসহ বেশ কয়েকটি ক্রিমের গায়ে উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখা গেলেও কিছু কিছু ব্র্যান্ডের পণ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের কোন তারিখ দেখা যায়নি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে হোয়াইট মিল্ক সাইন বডি লোশন, হোয়াইট স্পা গোল্ড, এনচেনটিউর লোশনসহ আরো অসংখ্য পণ্য। এসব পণ্যের গায়ে উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের কোনো তারিখ দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহ জব্বারিয়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের এক কর্মচারী বলেন, ‘শীতের আগাম প্রস্ততি নিয়েছি আমরা। গতকালই আমাদের নতুন পণ্য এসেছে। বিদেশি অনেক পণ্যের গায়ে তারিখ থাকেনা। ব্যাজ নাম্বারের সাথে থাকে ডিরেকশন। এসব ডিরেকশন দেখে নিতে হয়।
শাহ এন্টারপ্রাইজের এক কর্মচারী বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লিখা না থাকলে আমরা কি লিখে দেব? যেসব পণ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই সেটা কিনবেন না, যেটাতে আছে সেটাই কিনবেন। বিদেশি পণ্যগুলোতে উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের সময় দেয়া থাকে না। আমদের এখান থেকে নগরের বিভিন্ন মহল্লায়, উপজেলা ও গ্রামে যাচ্ছে পণ্যগুলো।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুলতানা আক্তার বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী চামড়ার জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে অ্যালার্জি সমস্যা, ত্বক সেন্সিটিভ (স্পর্শকাতর) হয়ে যায়। ব্রণের সমস্যা বাড়তে পারে, ত্বক মলিন, ফ্যাকাশে, খসখসেও হতে পারে। শুধু তাই নয়, স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া পণ্য ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী বিক্রি বন্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। জরিমানা করেছি, বর্তমানে অনেক কমেছে। তবুও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিয়ম মানে না। তারা মুখে বলছে বিদেশি পণ্য। কিন্ত বেশিরভাগ পণ্য দেশে নকল করে উৎপাদন করে। তাই প্রসাধনীর ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্সে। কিছু দিন আগেও একটি শপিং মলে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছি। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।’
বিদেশি পণ্যের উৎপাদন তারিখ না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদেশি পণ্যের উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ কেন থাকে না এটা জানা নেই। আসলে তারা ঠিক কোন দেশের কথা বলেছেন? এ প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের মোড়কজাত বিধিমালায় বলা আছে, পণ্য উৎপাদনের পর মোড়কিকরণ করতে হবে। সেখানে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, মূল্য এবং পণ্যের সম্পূর্ণ ডিটেউলস দিতে হবে। আর তা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এ বিষয়ে ক্রেতার করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদি এমন মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য কেউ বিক্রি করেন তাহলে একজন ভোক্তা আমাদের অফিসে সরাসরি এসে অভিযোগ জানাতে পারবেন। একই সাথে অনলাইনে ইমেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেব’।