শারমিন নাহার ঝর্ণা »
প্রকৃতি তার অপরূপ সৌন্দর্য প্রকাশ করে নানা রঙে, রূপে বিভিন্ন সমাহারে। সেই সৌন্দর্যের এক অনন্য সংযোজন হলো অতিথি পাখি। প্রতিবছর শীত এলেই হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আমাদের দেশে এসে হাজির হয়। তাদের আগমনে নদী, হাওর, বিল, জলাশয় ও বনাঞ্চল হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত ও রঙিন। অতিথি পাখিরা সাধারণত আসে শীতপ্রধান দেশ যেমন সাইবেরিয়া,মঙ্গোলিয়া, চীন ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। প্রচণ্ড ঠান্ডা, খাদ্যের অভাব এবং নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে তারা উড়ে আসে তুলনামূলক উষ্ণ অঞ্চলে। বাংলাদেশ তাদের জন্য এক আদর্শ আশ্রয়স্থল এখানে রয়েছে বিস্তৃত জলাভূমি, প্রচুর খাবার এবং অনুকূল আবহাওয়া।
হাওর-বাঁওড়, চর, নদীর তীর ও বিলজুড়ে অতিথি পাখির কলতানে প্রকৃতি যেন নতুন সুরে গান গায়।
পাতিহাঁস, নীলচে বুনোহাঁস, খয়রা হাঁস, গাঙচিল, পানকৌড়ি, চখাচখি, সরালি ও রাজহাঁস নানা প্রজাতির পাখিতে ভরে ওঠে আকাশ ও জলাশয়। ভোরের আলোয় তাদের দলবদ্ধ উড়ান এবং পানিতে বিচরণ দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
অতিথি পাখিরা শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না, তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষি পরিবেশকে উপকার করে এবং জলজ প্রাণীর খাদ্যচক্রে অংশ নিয়ে বাস্তুতন্ত্রকে সচল রাখে। একই সঙ্গে তারা পরিবেশের সুস্থ্যতার সূচক হিসেবেও বিবেচিত। যেখানে অতিথি পাখি আসে, সেখানে প্রকৃতি তুলনামূলক নিরাপদ ও সমৃদ্ধ।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, নানা কারণে আজ অতিথি পাখিরা হুমকির মুখে। অবৈধ শিকার, জলাভূমি ভরাট, বায়ু দূষণ এবং মানুষের অসচেতনতা তাদের নিরাপদ জীবনকে বিপন্ন করছে। অনেক পাখি আর আগের মতো ফিরে আসছে না। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য ও সম্পদ রক্ষায় আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।
অতিথি পাখি প্রকৃতির এক জীবন্ত উপহার। তাদের রক্ষা করা মানে প্রকৃতিকে রক্ষা করা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। সম্মিলিত উদ্যোগ ও ভালোবাসায় অতিথি পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুললেই প্রকৃতি থাকবে আরও সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত।





















































