জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা »
আনোয়ারা উপজেলার বড় বড় জলাশয় এখন ভিন দেশি পাখির কলকাকলিতে মুখর। ভোরে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মানুষের ঘুম ভাঙছে। শীতের আগমনী বার্তায় প্রতি বছর হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে অতিথি পাখি আসে আনোয়ারার বড় বড় পুকুর ও দিঘিতে। এসব পাখি দল বেঁধে এসব জলাশয়ে নেমে মনের সুখে সাঁতরে বেড়ায়।
উপজেলার মনু মিয়ার দীঘি, সুরতবিবির দিঘি, পদ্মাপুকুর, খাসখামা ও গুজুরা দীঘি ঘুরে দেখা যায়, জলপিপি, রাজসরালি, লালবুবা, পানকৌড়ি, বক, শামুককনা, চখপখিম, সারস, কাইমা, শ্রাইক, হরিয়াল, নারুন্দি, মানিকজোড়া, বালিহাঁস, পাতিহাঁস, লেজহাঁস, পেরিহাঁস, চমাহাঁস, গাং কবুতর, বনহুর, সাগর কৈতর, সি-গালসহ অসংখ্য প্রজাতির হরেক রকমের দেশি ও বিদেশি পাখি ঝাঁকবেঁধে এসব পুকুর-দীঘিতে উড়ে বেড়াচ্ছে। সকাল-বিকাল এসব পাখি দেখতে দীঘিগুলোর আশপাশে ভিড় জমাচ্ছে প্রকৃতি প্রেমিকেরা। শীতের শুরুতেই হঠাৎ করেই এসব পাখিদের আগমন ঘটে আর শীতের শেষের দিকে আবার হঠাৎ করেই পাখিগুলো উধাও হয়ে যায় বলে জানান স্থানীয়রা।
নারায়ন সুশীল কাঞ্চন নামের গুজুরা এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গুজুরা দত্তরহাটের পাশের এই দীঘিতে ছোটোকাল থেকেই শীত মৌসুমে আমরা অতিথি পাখি দেখে আসছি। শীতের শুরুতে পাখিগুলো আসে আবার একটু একটু গরম পড়তেই পাখিগুলো চলে যায়। সকাল-বিকেল আমার ঘর থেকে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ শুনতে পাই।
উপকূলে ঘুরতে আসা হাবিবা জান্নাত নামের এক পর্যটক জানান, শীতে সাগর দেখতে আসার অনুভূতিটাই ভিন্ন রকম। কারণ এসময় সাগর দেখার পাশাপাশি নানারকমের পাখিও দেখতে পাওয়া যায়। তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে সাগর দেখতে বেশি আসা হয়। বিশেষ করে সাগর উপকূলে উড়ে বেড়ানো গাঙ চিলের দৃশ্য খুবই চমৎকার লাগে আমার কাছে।
চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিত ভট্টাচার্য বলেন, সাধারণত শীত মৌসুমে ৯৫ শতাংশ পরিযায়ী পাখি আসে। অক্টোবর মাস থেকেই হাঁস জাতীয় বিভিন্ন পাখি আসতে শুরু করে। তবে বেশিরভাগ আসে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। পাখিরা জলাধারের পাশাপাশি যেসমস্ত জায়গায় গাছগাছালি রয়েছে সেসব জায়গায় অবস্থান করে। আনোয়ারার মধ্যে সমুদ্রের উপকূল, কেইপিজেডের বিভিন্ন লেক এবং বিভিন্ন পুকুর ডোবায় এই মৌসুমে বেশি পরিমাণে এই সমস্ত অতিথি পাখির আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই উপজেলায় অতিথি পাখির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। আমাদের কাছে অতিথিপাখিগুলো শিকার করার বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আসে তাই কেউ যাতে এসব পাখি শিকার করতে না পারে সে জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করা ছাড়াও নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।