সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »
ভারতের পাহাড়প্রমাণ ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে অজিরা থেমে যায় ১৮১ রানে। তবে বিশ্বকাপ অভিযান অজিদের এখনই শেষ হয়ে গেল কিনা তার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে নজর থাকবে অস্ট্রেলিয়ারও। আফগানরা জিতলে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ অভিযান শেষ। অন্যদিকে প্রবল শক্তিধর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত পৌঁছে গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।
সুপার এইটে দাপুটে শুরু করেছিল টিম ইন্ডিয়া। অন্য দিকে আফগানিস্তানের কাছে হেরে হঠাৎই ব্যাকফুটে চলে যায় অজিরা। চাপ অনুভব করতে শুরু করেন প্যাট কামিন্সরা। ভারতের বিরুদ্ধে তাঁদের জেতা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
শুরু থেকেই হিটম্যান ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। বিরাট কোহলি খাতা না খুলে ফিরে গেলেও অস্ট্রেলিয়া যে ভারতের উপরে চেপে বসতে পারেনি, তার প্রধান কারণ রোহিত শর্মা। তিনি নির্দয় হয়ে উঠলেন। ছক্কার বর্ষণ হল। কোন লেন্থে বল করবেন, সেটাই যেন ভুলে গেলেন অজি বোলাররা। রোহিত শর্মা তাঁদের ইচ্ছামতো মাঠের যত্রতত্র ছুড়ে ফেললেন।
আজ ভারতীয় ব্যাটিংয়ের স্টার তিনি। যেদিন তিনি খেলেন, সেদিন বাকিরা পার্শ্বচরিত্র। বড় ম্যাচের বোলার মিচেল স্টার্কের এক ওভারে উঠল ২৯ রান। তাঁর ওভারে চারটি ছক্কা এবং একটি চার মারেন রোহিত। স্টার্ক একটি বল ওয়াইড করেন। ১৯ বলে অর্ধশতরান করলেন রোহিত। তার পরে খেলা যত গড়িয়েছে রোহিত আরও ভয়ংকর হয়েছেন।
ভারত অধিনায়ক একদিকে ঝোড়ো ব্যাটিং করলেও পন্থ (১৫) কিন্তু মারতে গিয়ে ফেরেন। ঠিক যখন মনে হচ্ছে ভারত অধিনায়কের দ্রুততম সেঞ্চুরি পাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা, ঠিক তখনই স্টার্কের ইয়র্কার উইকেট ভেঙে দিল তাঁর। সূর্যকুমার (৩১), শিবম দুবে (২৮) এবং হার্দিক পাণ্ডিয়ার (২৭*) জন্য ভারত রানের পাহাড়ে চড়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর।
ভারতের ৫ উইকেটে ২০৫ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার (৬)। এদিন হেড ভারতের রান তাড়া করতে নেমে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ম্যাচের মোক্ষম সময়ে বুমরাহর বলে সেই হেডকে (৭৬) তালুবন্দি করলেন রোহিতই।
আহমেদাবাদে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে ট্রাভিস হেড একাই ভারতের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছিলেন। এদিনও তিনি আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠেন।
অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শও ভয়ংকর হয়ে ওঠার ঈঙ্গিত দিতে থাকেন। কথায় বলে ক্যাচেস উইন ম্যাচেস। কুলদীপের বলে মার্শের দুর্ধর্ষ ক্যাচটি ধরেন অক্ষর প্যাটেল।
৮১ রানের পার্টনারশিপ ভাঙলেন কুলদীপ। ম্যাক্সওয়েল যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি ঘুরিয়ে দিতে পারেন। হেডের সঙ্গে ম্যাড ম্যাক্সও বিপজ্জনক হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু কুলদীপের ম্যাজিক ডেলিভারিতে ম্যাক্সওয়েলের (১৯) উইকেট ভেঙে গেল। মার্কাস স্টোয়নিসও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। কিন্তু ট্রাভিস হেড একাই লড়াই নিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতের ক্যাম্পে। বুমরাহ থামিয়ে দিলেন হেডকে। তিনি যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ততক্ষণই শ্বাস ছিল অস্ট্রেলিয়ার। তিনি ফিরতেই ম্যাচের দখল আরও নিয়ে নেয় ভারত। একে একে অজিদের দেউটি নিভল।
ভারত তিন ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে সেমিফাইনালে। তাদের নেট রান রেট ২.০১৭। অস্ট্রেলিয়া এখনও ২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে। তাদের নেট রান রেট -০.৩৩১। আফগানিস্তান ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে, নেট রান রেট -০.৬৫০। আর বাংলাদেশ দুটি হার দেখেছেন, নেট রান রেট -২.৪৮৯।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ২০৫/৫ (রোহিত ৯২, সূর্যকুমার ৩১, দুবে ২৮, পান্ডিয়া ২৭, পন্ত ১৫; হ্যাজলউড ১/১৪, স্টার্ক ২/৪৫, স্টয়নিস ২/৫৬, জাম্পা ০/৪১)
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৮১/৭ (হেড ৭৬, মার্শ ৩৭, ম্যাক্সওয়েল ২০, ডেভিড ১৫, কামিন্স ১১* ; অর্শদীপ ৩/৩৭, কুলদীপ ২/২৪, অক্ষর ১/২১, বুমরা ১/২৯, জাদেজা ০/১৭)
ফল: ভারত ২৪ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: রোহিত শর্মা (ভারত)।