সুপ্রভাত ডেস্ক »
বেগম রোকেয়া যদি অচলায়তন ভেঙে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে সামজে নারীদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হত না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারীরক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য পাঁচ নারীর হাতে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ তুলে দিয়ে এ কথা বলছিলেন শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমাদের নারীদের শিক্ষা, নারীদের জাগরণ, নারীদের যতটুকু অর্জন এর পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্মদিন। কাজেই আমি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটুকু বলব, তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করে যদি আমাদের মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন তাহলে আজকে আমরা যে যেখানে আছি কেউ কোথাও থাকতে পারতাম না।’
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে নারীদের হাতে পদক তুলে দেন সরকার প্রধান।
নারীশিক্ষায় অবদানের জন্য পদক পেয়েছেন ফরিদপুরের রহিমা খাতুন। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার জন্য চট্টগ্রামের অধ্যাপক কামরুন নাহার বেগম (অ্যাডভোকেট) এই পদক পান।
নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য সাতক্ষীরার ফরিদা ইয়াসমিন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নারী জাগরণে ভূমিকার জন্য নড়াইলের আফরোজা পারভীন এবং পল্লী উন্নয়নে ঝিনাইদহের নাছিমা বেগম বেগম পদক পান চলতি বছরে।
পুরস্কার হিসেবে তাদের ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম সোনার পদক, একটি রেপ্লিকা, নগদ চার লাখ টাকা এবং একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
রোকেয়া যে সময়ে লড়াই করেছেন, সেটা ‘কঠিন একটা পর্দার যু’গ ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সময়ও তার (বেগম রোকেয়া) লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ দেখে তার ভাই আব্বাস তিনি প্রথম তাকে হাতেখড়ি দেন, অক্ষরজ্ঞান দেন এবং তার সৌভাগ্য, বিয়ের পর তার স্বামী সেই শাখাওয়াত হোসেন, যিনি তাকে লেখাপড়া শেখান।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের যে সমাজে একটা অবস্থান রয়েছে, এবং নারীরাও যে সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারে, সেটাই তিনি বারবার দেখিয়েছেন এবং তার লেখার ভেতরেই আমরা পেয়েছি।’
বেগম রোকেয়াকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের কন্যাগুলোকে সুশিক্ষিতা করিয়া কার্যক্ষত্রে ছাড়িয়া দাও। নিজেরা নিজেদের অন্ন, বস্ত্র উপার্জন করুক।
‘এই যে মেয়েদের নিজেরা নিজেদের উপার্জন করা বা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এই যে পথ দেখানো, এটা তো বেগম রোকেয়াই আমাদের দেখিয়ে গেছেন এবং তাঁর স্বপ্ন ছিল একদিন নারীরা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট হবে, নারীরা সমস্ত দায়িত্ব নেবে। নারীর স্থান হবে। এটাই ছিল তার স্বপ্ন। তাঁর দূরদৃষ্টি এবং তিনি যে আকাক্সক্ষা করে গেছেন, আমরা কিন্তু এখন ধীরে ধীরে সেটা অর্জনের পথে।’
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর অবদান স্মরণ করে প্রতিবছর এ পুরস্কার দেয় বাংলাদেশ সরকার।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.হাসানুজ্জামান কল্লোল। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে আফরোজা পারভীন বক্তব্য রাখেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয় অনুষ্ঠানে।