রাস্তায় বিছানো পাথর ফুটপাতে
গাড়ি চলাচলে বিঘœ, মরণফাঁদ!
মোহাম্মদ রফিক:
প্রায় তিন বছর আগে শেষ হয় চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন-হাটহাজারী চার লেন সড়কের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের অধীন অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী সদর পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়কটির দুপাশে ২৪ ফুট করে ৪৮ ফুট প্রশস্ত করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় হয় ১২৯ কোটি ৫১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
কিন্তু তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কটি পরিণত হয় করুণ দশায়। অধিকাংশ জায়গায় পিচ ফেটে এবড়োথেবড়ো হয়ে গেছে। ব্যস্ত এ সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিনিয়ত বিঘœ ঘটছে। অতিসম্প্রতি সড়কটির যেসব জায়গায় পিচ নস্ট হয়েছে সেসব মেরামতের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
জানা গেছে, মেরামতের জন্য অক্সিজেন থেকে মদনহাট পযন্ত সড়কের অন্তত ৫০-৬০টি স্পটে পিচ তুলে ফেলা হয়েছে। এসব স্পটে নতুন করে পিচ ঢালাই করার পাথর বিছানো হয়েছে। কিন্তু এসব পাথর এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের কমপেকশনের জন্য পাথরগুলো রাখা হলেও গাড়ির চাকার ঘষায় রাস্তা এবং ফুটপাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে।
এসব পাথরের উপর দিয়ে গাড়ি চলতে গিয়ে প্রতিদিন বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মোটরসাইকেল আরোহীরা দুঘটনার শিকার হচ্ছেন। প্রাইভেট কার, জিপ, বাস, ট্রাক ও লরি এসব পাথরের উপর দিয়ে চলার সময় পাথর গিয়ে পড়ছে পাশাপাশি চলতে থাকা অন্য গাড়ির উপর এবং পথচারীদের গায়ে। এতে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনের, অন্যদিকে আহত হচ্ছেন পথচারীরা।
সরেজমিন বালুছড়া, আমানবাজার, চৌধুরীহাট, ফতেয়াবাদ, ধোপারদিঘির পাড়, নন্দিরহাট, ইসলামিয়া হাট ও মদনহাট এলাকায় গেলে দোকানদার ও স্থানীয় বাসিন্দারা সুপ্রভাতের কাছে পাথরের কারণে ঘটে যাওয়া নানা দুঘটনার চিত্র তুলে ধরেন।
ফতেয়াবাদ ছড়াকুল এলাকার ওষুধের দোকানদার আব্দুল মান্নান জানান, প্রায় মাস খানেক আগে তার দোকানের সামনে সড়কের ১৫-২০ ফুট জায়গা খুড়ে সওজ। ওই জায়গায় পাথর বিছিয়ে দিলেও বিটুমিন দেওয়া হয়নি। ফলে যানবাহন চলতে গিয়ে কিছদিন আগে একটি পাথর এসে পড়ে ওষুধ কিনতে আসা দিদারুল নামে এক ব্যক্তির মাথায়। সাথে সাথে দিদারের মাথা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় দ্রুত তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ধোপার দিঘি পাড় এলাকার ধনপতি মিষ্টির দোকানদার এক কর্মচারী জানান, মেরামতের জন্য খুড়ে ফেলা সড়কের জায়গায় বিছানো পাথর রাস্তা এবং ফুটপাতে ছড়িয়ে গেছে। ওই জায়গায় প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দুঘটনা।
মদনহাট এলাকার বাসিন্দা আমজাদ আলী অভিযোগ করেন, সড়কের পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরগুলো অনেকেই নিমাণকাজের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেব। লাখ লাখ টাকার পাথর এভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্মাণজাজে সওজ এর অবহেলা ও গাফিলতিকে দায়ী করছেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) চট্টগ্রামের নিবাহী প্রকওশলী জুলফিকার আহমেদ জানান, বৃষ্টির কারণে মেরামত কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, পাথরগুলো কমপেকশনের জন্য রাখা হয়েছে। তবে এগুলো রাস্তায় এবং আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়ার কারণে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটা এবং জনসাধারণের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন জুলফিকার।
জানা গেছে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ২০১০ সালের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা এবং দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির মধ্যে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ধরা হয় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিকে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কমবেশি ১৮ হাজার গাড়ি চলাচল করে।
আনোয়ার পপুলার ও মেসার্স এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। সড়কের ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার সম্প্রসারণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল এম বিল্ডার্সকে। আনোয়ার পপুলারকে ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়কের কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও কাজ শেষ করতে না পারা এবং সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যাদেশ চুক্তি বাতিল এবং জরিমানা করা হয়।