মোহাম্মদ নাজিম :
বাংলাদেশের বৃহৎ অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ পরিদর্শন করে দেখা যায় বাজারে মধ্যসত্ত্বাভোগী পাইকারি সিন্ডিকেট অতিরিক্ত দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করছে। রয়েছে কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। নগরীর সাগরিকায় অবস্থিত লিন্ডে বাংলাদেশের প্রধান অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
বুধবার (১০ জুন) বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত লিন্ডে বাংলাদেশের প্রধান অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। ১.৪ কিউবিক লিটার মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার (৯৯.৯% ঘনত্বের) এর রিফিলিং দাম ১২২ টাকা। কিন্তু আন্দরকিল্লা ও সদরঘাট এলাকায় বিভিন্ন পাইকারি দোকানিরা রিফিলিংয়ের ক্ষেত্রে দাম রাখছে ১০০০ টাকারও বেশি।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি, কাট্টলী সার্কেল) মো. তৌহিদুল ইসলাম সুপ্রভাতকে বলেন, আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডারের ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লিন্ডে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, গত দুইদিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসক প্রতিষ্ঠান কে মাত্রাতিরিক্ত দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যক্তি পর্যায়ে বিক্রি এবং বেশি মূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস রিফিলিংয়ের জন্য জরিমানা করা করা হয়েছে তারা লিন্ডে বাংলাদেশের কোনো বৈধ প্রতিনিধিও নয়।
এসব প্রতিষ্ঠান গুলোহলো হাসান ট্রেডার্স, ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্কস, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড। তিনি আরো বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের প্যাডে লিন্ডে বাংলাদেশের নাম লিখে রেখেছে কিন্তু লিন্ডে বাংলাদেশের বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গিয়েছে শুধুমাত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রেসক্রিপশন এবং এনআইডি কার্ডের ভিত্তিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি এবং রিফিলিং হচ্ছে। লিন্ডে বাংলাদেশের মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটরও বাংলাদেশে নাই। তারা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ডিমান্ড/ প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে লিন্ডের তৈরিকৃত মেডিকেল গ্রেড সিলিন্ডারে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
লিন্ডে বাংলাদেশের নামের অপব্যবহার করে বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ (মালিক- শহীদ) অক্সিজেনের ব্যবসা করছেন। লাইসেন্সবিহীন এবং মাত্রাতিরিক্ত দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার পেপারলেসভাবে (ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ ছাড়া) বিক্রির দায়ে গত ৯ জুন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক চকবাজার থানাধীন বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজকে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন।
লিন্ডে বাংলাদেশের বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন রয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বেশি থাকায় জরুরি ভিত্তিতে লিন্ডে বাংলাদেশ মেডিক্যাল গ্রেডের অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রস্তুত করছে। আগামী ২০ জুন থেকে মেডিক্যাল গ্রেডের সরবরাহ আরো বাড়বে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রায় চার হাজারের মতো মেডিক্যাল গ্রেড সিলিন্ডার সাপ্লাই চেইনে যুক্ত হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলমা আরো বলেন, চট্টগ্রামের পাইকারিদের সিন্ডিকেট যারা অক্সিজেন সিলিন্ডার, রেগুলেটর এবং সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিলিংয়ে এর মাত্রাতিরিক্তভাবে দাম কারসাজি করছে। এগুলো হাসান ট্রেডার্স, মেসার্স ব্রাদার্স প্রকৌশলী ওয়ার্ক, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ ও জিলানী অক্সিজেন লিমিটেড।
তবে সুপ্রভাত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রশাসন কর্তৃক অভিযুক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডর বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে বাংলাদেশে মেডিকেল গ্রেড (৯৯.৯%) পিউরিটির অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ (সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান), স্পেকট্রাম অক্সিজেন লিমিটেড (বেসরকারি), কালুরঘাট ও ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ। এসব কোম্পানির কোনো ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর নেই। তারা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট প্রস্তুত করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে প্লান্টে অক্সিজেন গ্যাস সাপ্লাই করে।
এছাড়া হাসপাতালের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে ব্যক্তি পর্যায়ে বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট রোগীদের জন্য ১.৪ কিউবিক লিটার (১৪০০ লিটার অক্সিজেন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন) সিলিন্ডার বিক্রি করেন। যেগুলো যথাযথভাবে পরীক্ষাকৃত এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবহারযোগ্য সিলিন্ডার।
লিন্ডে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেলো, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামক যে প্রতিষ্ঠানকে গত ৯ জুন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা করা হয়েছে তাদেরকে লিন্ডে বাংলাদেশ ২০১৬ সালে কালো তালিকাভুক্ত করেছিলো। লিন্ডে বাংলাদেশ যেসকল হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপ্লাই করে সেসব প্রতিষ্ঠানে লিন্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিসিমল্লাহ এন্টারপ্রাইজ কাজ করতো। চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলিং এবং সিলিন্ডার সরবরাহের সময় টেম্পারিং করায় বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিলো বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান।
কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামভিত্তিক বেশকিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসব পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরে মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন হিসেবে বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের অক্সিজেন প্রস্তুতকারীদের মধ্যে চট্টগ্রামে যেসকল বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো হলো সীমা এন্টারপ্রাইজ, মদিনা এন্টারপ্রাইজ, আরি গ্যাস, গোল্ডেন অক্সিজেন ইন্ডাস্ট্রিজ ও জিডি সুবেদার ইন্ডাস্ট্রিজ।