রাজিব শর্মা
নগরীর পাইকার বাজারখ্যাত খাতুনগঞ্জ বাজারে যে আলুর (পুরাতন) কেজিপ্রতি ৯ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রেতারা ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছে। অন্যদিকে বাজারে আসা নতুন আলু বিক্রি করছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় যা পাইকার বাজারে ১৭ থেকে ২০ টাকা কেজিতে। আলুর মনগড়া দাম বসিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের।
গতকাল সোমবার সকালে নগরীর রিয়াজউদ্দিনবাজার, বক্সিরহাট ও কাজীর দেউড়ী বাজার ঘুওে ভোক্তাদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।
ভোক্তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন খরচের ইস্যু টেনে এনে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দামে আলু বিক্রি করছে। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসা আলু ক্রেতা আবদুল হালিম বলেন, ‘শীতকালীন প্রত্যেক সবজির দাম কিছুটা কমলেও সে হিসেবে আলুর দাম বাড়তি নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অথচ খাতুনগঞ্জ বাজারে পুরাতন আলু সস্তায় বিক্রি হচ্ছে। খরচের সাথে সমন্বয় রেখে কয়েক টাকা বাড়াতে পাওে কিন্তু কেজি প্রতি ১৫ টাকার উপরে বাড়তি নেওয়ার কোন যৌক্তিকতা হতে পারে না।’
তরিকুল ইসলাম নামের জলসা মার্কেটের এক হোটেল ম্যানেজার বলছেন, ‘নতুন আলু বাজারে এসেছে। কাজেই পুরাতন আলুর দাম কমছে। আমরা পুরাতন আলুকে এখন নাস্তার কাজে ব্যবহার করছি। কিন্তু বাজারে ব্যবসায়ীরা পুরাতন আলুও বিক্রি করছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। যা আমরা খাতুনগঞ্জের আড়ৎ থেকে কেজিপ্রতি ৯ টাকা করে পাচ্ছি। আমি মনে করছি , দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার পেছনে অসাধু চক্র জড়িত। এতে প্রশাসনের তদারকি করা জরুরী বলে মনে করছি।’
আলুর পাইকারি বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের কাঁচামালের আড়তদার ছালে আহম্মদ এন্ড সন্সের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আলুর বাজার এখন সস্তা। পুরাতন আলু তেমন বিক্রি হচ্ছেই না। গত একমাস ধরে কেজিপ্রতি ৯ টাকা থেকে ১১টাকায় পুরাতন আলু বিক্রি হয়েছে। আজকের বাজার কেজিপ্রতি সাড়ে ৯টাকা।’
অন্যদিকে আলুর বাজারে দাম বাড়তি রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বক্সিরহাটের আলু ব্যবসায়ী মো. শিমুল বলেন, ‘পুরাতন আলু আমরা ১২ টাকা কিনলেও তা ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। কারন এক বস্তা আলু কিনলে তার মধ্যে আট কেজির বেশি কাটা বা পঁচা থাকে, বালি থাকে। তা আমাদের পরিস্কার করতে হয়। তাছাড়া আমাদের পরিবহন ও শ্রমিক খরচ আছে। সব খরচ সমন্বয় কওে আলুর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি করছি। আর কম দামে বিক্রি করলে আমরা লোকসান হবে।’
বক্সিরহাটের সবজি ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, ‘সবজিতে এখন তেমন লাভ নেই। আলুতে আমরা দাম বেশি নিচ্ছি আপাতত বাইরে দিকে মনে হতে পারে । কিন্তু আমাদের দৈনিক খরচ কেউ দেখছে না। আমরা খরচের সাথে সমন্বয় রেখে দাম নিচ্ছি।’
অন্যধিকে কাজীর দেউড়ী বাজারে পুরাতন আলু কেজিপ্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি করছে। এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. দিদার বলেন, ‘আমরা রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে ভালো মানের আলু কিনে বিক্রি করি। তাদের দামের সাথে খরচ সমন্বয় করে বিক্রি করছি। আমাদের কেজি প্রতি কয়েক টাকা লাভ থাকে।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের আলু ব্যবসায়ী ও আড়তদার মো. শাহ আলম বলেন, ‘কিছুদিন আগে অন্য জেলায় আলুর চাহিদা ও দাম দুটোই ভাল ছিলো। কিন্তু এখন তেমন চাহিদা না থাকায় দাম কমে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে হিমাগার গুলোতে আলু সংরক্ষণ শুরু হবে। তখন দাম কিছুটা বাড়তে পারে।’
আলুর বাজার নিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থার অনিয়ম নিয়ে বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত। প্রশাসনের অবহেলার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের মনগড়া দাম দিয়ে ভোক্তাদের হয়রানি করছে। একটি পণ্যে ব্যবসায়ীরা যেখানে ১০ শতাংশ লাভের কথা সেখানে ৩০০ শতাংশ লাভে বিক্রি করা মানে বাজার আর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেই। অসাধু ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে। আর একই পণ্য একেক বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের বাজার তদারকি করা প্রয়োজন অন্যথায় দেশের বাজার ব্যবস্থা অসাধু ব্যবসায়ীদের দখলে পুরোটায় চলে যাবে বলে মনে করেন তিনি।