কাল উদ্বোধন ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’
ভূঁইয়া নজরুল »
প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরে মাত্র একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ওয়াসা। মোহরা পানি শোধনাগার নামের সেই প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল দৈনিক ৯ কোটি লিটার। প্রথম প্রকল্পের ৩০ বছর পর শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-১ চালু হয় ২০১৭ সালের ১২ মার্চ। দিনে ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার উৎপাদন ক্ষমতার এ প্রকল্পের পর ২০২০ সালে চালু হয় শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্প। আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’। বিগত পাঁচ বছরে নতুন এ তিন প্রকল্পের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ৩৭ কোটি ৬০ লাখ লিটার। আর সব মিলিয়ে ওয়াসার এখন দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার।
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নগরের পানি সমস্যা সমাধানের দিকে নজর দেয়। তখন চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসেবে (পরবর্তীতে বোর্ড পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে পরিবর্তন) রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থাকায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি আরো দুটি প্রকল্প ((ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প ও চট্টগ্রাম মহানগরীর স্যুয়ারেজ প্রকল্প) চলমান রয়েছে।
দীর্ঘ ৩০ বছরে যেখানে মাত্র একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে সেখানে বিগত ১২ বছরে ৫টি প্রকল্প শেষ করে আরো দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘বিগত সময়ে যেসব আমলা দায়িত্বে ছিলেন তাদের ক্ষেত্রে হয়তো সীমাবদ্ধতা ছিল। তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোর দিয়েছি। একইসাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের পানি ও স্যুয়ারেজ প্রকল্পের বিষয়ে অনেক আন্তরিক ছিলেন। আর এতেই এতোগুলো প্রকল্পের বাস্তবায়ন।’
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ১২ মার্চ পতেঙ্গা বোট ক্লাব প্রাঙ্গণে ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১’ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্যুয়ারেজ প্রকল্প নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীকে দূষণ থেকে মুক্ত করতে তিনি স্যুয়ারেজের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আর এতেই ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
কাল উদ্বোধন শেখ হাসিনা পানিশোধনাগার-২
কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ প্রকল্পটি উদ্বোধন হয়েছিল ২০১৭ সালের ১২ মার্চ। দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার উৎপাদন ক্ষমতার এ প্রকল্পের পাশের জায়গায় দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ গত বছর শেষ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে তা পরীক্ষামূলকভাবে পানি উৎপাদন শুরু করে। দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার উৎপাদন ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটের নামকরণও করা হয় ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’। কাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ।
এদিকে গতকাল বিকেলে রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পের পুরোদমে পানি উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একইসাথে প্রকল্পের পানি থেকে ময়লাগুলো পৃথকীকরণের মাধ্যমে মাটি আকারে স্থানান্তরও হচ্ছে।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রবিউল হোসেন বলেন, ‘আমরা এক বছর যাবৎ পরীক্ষামূলকভাবে পানি উৎপাদন করছি। আর পানির সাথে যে ময়লাগুলো (স্ল্যাজ) থাকছে তা পৃথকীকরণের মাধ্যমে কেক আকারে রূপান্তর করে পরিশোধিত পানি আবারো কর্ণফুলীতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’
স্ল্যাজগুলো দেখতে চাইলে প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ছাঁকুনির মাধ্যমে সংগৃহীত স্ল্যাজগুলো পৃথক বেডে (খণ্ড খণ্ড প্লট আকারের ভূমি) জমা করে মাটির কেক বানানো হয়।’ সেই বেডে গিয়ে দেখা যায় মাটির টুকরোগুলো কেকের মতো খণ্ড খণ্ড আকারে রয়েছে। আর মাটিগুলো বিক্রিও করা যায়।
৪ হাজার ৪৮৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিচ্ছে ২৮০০ কোটি ৯২ লাখ, বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৬৬৫ কোটি ১৬ লাখ এবং ওয়াসা দিচ্ছে ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় কি কি কাজ হচ্ছে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক ও ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়াও ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার কনভেন্স পাইপ লাইন, ৩১৭ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন, ৭০০ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ লাইন, দুটি সার্জ ট্যাঙ্ক, ৫৯টি ডিএমএ নির্মাণ, ২ কোটি ৪৮ লাখ লিটার ধারণ ক্ষমতার জলাধার নির্মাণ এবং ৩০ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার একটি সুউচ্চ জলাধার নির্মাণকাজ রয়েছে।’
দৈনিক উৎপাদন ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত
দৈনিক ৯ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতার মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৮৭ সালে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১’ প্রকল্পটি চালু করা হয়। এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার। পরবর্তীতে হালদার পানি পরিশোধন করে মদুনাঘাটে চালু করা হয় ৯ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতার ‘শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্প’। এটি চালু হয় ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি। কাল উদ্বোধন হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’ প্রকল্পটি। এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার। ভূপৃষ্ঠস্থ পানি পরিশোধন করে ওয়াসা দৈনিক উৎপাদন করছে ৪৬ কোটি ৬০ লাখ লিটার পানি। এর সাথে ৩৪টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে উৎপাদন হওয়া ৩ কোটি ৪০ লাখ লিটার পানির মাধ্যমে ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন গিয়ে ঠেকেছে ৫০ কোটি লিটারে। কর্ণফুলী নদীর ওপারে চলমান রয়েছে ভান্ডালজুরি পানি সরবরাহ প্রকল্প। দিনে ৬ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতার প্রকল্পটি চলতি বছরের শেষে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, একসময় চাহিদার এক তৃতীয়াংশ পানি সরবরাহ করলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা বর্তমানে নগরবাসীর চাহিদার প্রায় সমান পানি সরবরাহ করছে।