৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পাল্টেছে চিত্র
ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্ধ থাকার ‘সুযোগ নিয়েছেন’ ব্যবসায়ীরা
অতি মুনাফার লোভে মজুদ করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা
সালাহ উদ্দিন সায়েম:
নগরীর খাতুনগঞ্জের আড়তে সোমবার রাত পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫টাকা কেজি দরে। মাত্র ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে মঙ্গলবার সকাল থেকে পাইকারি বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। সকালে ছিল ৫৫তে, দুপুরে ৬৫, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পর দাম চড়ে যায় ৭০ টাকায়!
সোমবার রাত পর্যন্ত নগরীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল কেজি প্রতি ৫০ টাকা।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার খবরে খুচরা বিক্রেতাদের চোখ যেন কপালে উঠে যায়! মঙ্গলবার সকালেই পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। খাতুনগঞ্জের পাইকারি দামের সাথে পাল্লা দিয়ে খুচরা বাজারে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। রাত পর্যন্ত খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৮০ টাকায় এসে ঠেকেছে।
পেঁয়াজের দামের গতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলতে পারছেন না খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা। খুচরা বিক্রেতারা এখন প্রতিনিয়ত চোখ রাখছেন খাতুনগঞ্জের আড়তের দিকে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার মেসার্স রাসেল অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রাসেল সুপ্রভাতকে বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়াতে পেঁয়াজের দামের গতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলা মুশকিল। আজ তিন দফা দাম বেড়েছে। অন্য দেশ থেকে দ্রুততম সময়ে পেঁয়াজ আমদানি না হলে পণ্যটির দাম গত বছরের মতো অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন আড়তদার ও কমিশন এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলেও তিনটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় ২০০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ২৪ টন) পেঁয়াজ দেশে আসার পথে রয়েছে। এসব পেঁয়াজের চালান আসলে হয়তো সপ্তাহ খানেক পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে থাকবে।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজের একটা চালান আসতে পারে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা।
এদিকে খুচরা বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা গতকাল পেঁয়াজ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন খাতুনগঞ্জে। মণ মণ পেঁয়াজ কিনে তারা মজুদ করে রাখছেন বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা।
নাম প্রকাশ না করে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের একজন আড়তদার সুপ্রভাতকে জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের জরিমানার ভয়ে আড়তদাররা এখন পেঁয়াজ মজুদ করছেন না। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। অতি মুনাফার আশায় খুচরা বিক্রেতারা মণ মণ পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
রেয়াজ উদ্দিন বাজারের আলম অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম বলেন, ভারত পেঁয়াজ বন্ধ করে দেওয়াতে কিছুদিন পর বাজারে পেঁয়াজের সংকট হবে। তাই ১০ মণ মতো পেঁয়াজ কিনে এনেছি। বাজারে সবাই যে দামে বিক্রি করবে আমিও সেই দামে বিক্রি করবো। এতে দোষের কিছু দেখছি না।
৮ ঘণ্টার ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এসে প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
চৌমুহনী বাজারে আসা আগ্রাবাদ হাজী পাড়ার বাসিন্দা খাইরুল হক বলেন, সোমবার রাত পর্যন্ত পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ টাকা। রাত পেরিয়ে সকালের মধ্যে কীভাবে পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা হলো ? রাতারাতি তো ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনে আনেনি। দোকানে যে পেঁয়াজ মজুদ ছিল তারা এখন তা বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। এটা তো তারা জুলুম করছেন। মোবাইল কোর্ট অভিযান না করাতে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম সুপ্রভাতকে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পেঁয়াজের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বাজারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আবারও অভিযান শুরু করা হতে পারে।
দক্ষিণ ভারতে বন্যায় পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়াতে সপ্তাহ খানেক আগে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে এক লাফে ৫০ টাকা বেড়ে যায়। সংকটের কারণে ভারত সোমবার রাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে।