২ মাসেই বিলীন হচ্ছে ৮০ লাখ টাকার উন্নয়নকাজ

মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া »

চকরিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পাউবোর সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিম্নমানের কাজ করায় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ডাম্পিং করা বেশিরভাগ সিমেন্ট, বালু মিশ্রিত বস্তা। এতে তীর সংরক্ষণ কাজের সুফল নিয়ে চরম অনিশ্চতায় দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী জনপদের বাসিন্দারা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ তুলেছেন, নিম্নমানের কাজের ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দের ৮০ লাখ টাকা পানিতে তলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি ২০২৪ সালের জুন মাসে অর্থাৎ মাত্র দুইমাস আগে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বাঘগুজারা রাবার ড্যাম লাগোয়া মুন্সিঘোনা এলাকায় চারশত মিটার এলাকায় মাতামুহুরী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ হাজার বস্তা সিমেন্ট বালুমিশ্রিত ব্যাগ ডাম্পিং করার মাধ্যমে মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাদ্দ দিয়েছেন প্রায় ৮০ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে জুন মাসে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাউবো থেকে কয়েক দফায় বিল উত্তোলন করে নিয়েছে। এরইমধ্যে গত আগস্ট মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা দু’দফা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিচে নেমে গেছে ডাম্পিং করা বেশিরভাগ বালুভর্তি বস্তা। এই অবস্থায় অবশিষ্ট থাকা অংশের কাজও নদীতে তলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয় লোকজন জানান, কক্সবাজারের ঠিকাদার দুর্গা দাশের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঘরনার একটি সিন্ডিকেট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বাঘগুজারা রাবার ড্যাম লাগোয়া মুন্সিঘোনা এলাকায় মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন। ২০২৪ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিমেন্ট বালু মিশ্রিত বস্তা নদীতে ডাম্পিং করা শুরু করে ঠিকাদারের লোকজন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন আওয়ামী লীগের ঘরনার হওয়ায় তারা কাজের শুরুতে অনিয়মের আশ্রয় নিলেও ভয়ে এলাকাবাসী বাধা দিতে সাহস করেনি। পক্ষান্তরে ঠিকাদার দুর্গা দাশ স্থানীয় জনগণকে ভীতিতে রেখে কাজটি উঠিয়ে নিতে বরইতলী মুন্সিঘোনা এলাকার কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে।

এ সুযোগে কন্টাকে কাজের দায়িত্ব পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তীর সংরক্ষণ কাজের সন্নিকট এলাকায় সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা বস্তা ভরে ফের একই এলাকায় ডাম্পিং করেছে। অন্যদিকে বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিং করার আগে সেখানে জিও ট্রেক্টাইলের উপরিভাগে কংক্রিট দেওয়া হয়নি।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান বলেন, মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে ডাম্পিং করা বালু একই স্থান থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আবার ডাম্পিংয়ের আগে নদীর তলদেশে বালুভর্তি বস্তা এলোপাতাড়ি না ফেলার কারণে তীরে ডাম্পিং করা বালুর বস্তা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টে পুনরায় কাজ করে না দিলে তীরে অবশিষ্ট থাকা বালুভর্তি বস্তাসমূহ নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে কাজের তদারকিতে নিয়োজিত ঠিকাদার দুর্গা দাশ মুঠোফোনে মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা অনিয়ম করেছি, তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কোথায় ছিল। কাজ তদারকির দায়িত্ব তো ওনাদের ছিল।

এ ব্যাপারে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপে ডাম্পিং করা বালু ভর্তি কিছু বস্তা সরে গেছে এটা সত্য। আমরা ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছি, নদীতে নেমে যাওয়া বালভর্তি বস্তাসমূহ পুনরায় ডাম্পিং করার জন্য।

তিনি বলেন, ঠিকাদার অবশ্যই কাজ করে দেবেন। যেহেতু তাদের সিকিউরিটি মানি এখনো আমাদের কাছে রক্ষিত আছে। একবছর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ রয়েছে।