চকবাজার কাঁচাবাজার
রুমন ভট্টাচার্য :
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত চকবাজার কাঁচাবাজার উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। উদ্বোধন করেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। নীচতলায় মাছের বাজার চালুর ১ বছর পার হলেও, চালু হয়নি দ্বিতীয় তলা। তৃতীয় তলার কাজও অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে আর্থিক সংকটের কারণে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা চালু করার তেমন কোনো তোড়জোর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চসিকসহ বরাদ্দ পাওয়া দোকান মালিক ও বাজারের ইজারাদার।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, চকবাজার কাঁচাবাজারের তিনতলা উঠতেই সময় লেগেছে সাত বছর। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম দায়িত্বে থাকার সময় সাড়ে ১০ ঘণ্টা জায়গার ওপর ৯ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। শুরুতে পাইলিংয়ের কাজ হয়ে ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে কাজ। পরে ২০১৬ সালে আবার শুরু করা হয় দ্বিতীয় তলার কাজ।
সরেজমিন দেখা যায়, নীচতলায় জমজমাট মাছ বাজার। কিন্তু দ্বিতীয় তলা সম্পূর্ণ খালি পড়ে আছে। আর তৃতীয় তলায় নির্মাণ সামগ্রী স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রাত হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বিরাজ করে ভূতুড়ে পরিবেশ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রাস্তা ও ফুটপাতে ভাসমান ব্যবসায়ীর কারণে বাজার চালু হচ্ছে না। আছে বিভিন্ন গ্রুপের চাঁদাবাজি। বেশ কয়েকবার চসিকের অভিযানেও মিলেনি সুফল। এছাড়া দিনে বখাটে ও রাতে আলো না থাকায় বাড়ে মাদকসেবীর আড্ডা। স্থানীয় থানা পুলিশও নির্বিকার।
স্থানীয়রা জানান, চকবাজার সকাল-রাত পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাতে দখলের মহোৎসব চলে। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চলে। কিন্তু কোনো সুফল নেই। উচ্ছেদের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আবারও দখল হয়ে যায়। দখলের কারণে হাঁটাচলাও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চকবাজার ডিসি রোডের বাসিন্দা অর্পিতা সরকার রিমি বলেন, ‘রাস্তা দখল করে বাজার বসার কারণে রাতের বেলা আরো অবস্থা খারাপ। এসব দেখার কেউ নেই।’
চকবাজার কাঁচাবাজারের ইজারাদার মোহাম্মদ ইদ্রিছ হোসেন বলেন, ‘বাজার নেওয়ার পর থেকে দ্বিতীয় তলা চালু করার জন্য করপোরেশনে লিখিত ও মৌখিকভাবে বহুবার বলেছি। এছাড়া রাস্তা ও ফুটপাতে বসা সকলের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু তারা ভাড়া বেশি অজুহাতে কেউ আসছে না। এ কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, শুরুতে সাড়ে ১০ গণ্ডা জায়গার উপর ৯ তলা ভবন নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল। মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ কোটি টাকা। বর্তমানে ৭ তলা তৈরির কথা থাকলেও দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত উঠতেই পার হয়েছে ৭ বছর। দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে ৭৬টি করে মোট ১৫২টি দোকান রয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আবুল কাশেম কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইরফানুল করিম জানান, ‘চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বর তৃতীয়তলা পর্যন্ত শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তখন পুরো কাজ শেষ করা যায়নি। ফলে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত শেষ করতে পেরেছি। এরপর থেকে আর কোনো কাজ হয়নি। তৃতীয় তলার কাজের জন্য আবার টেন্ডার হওয়ার কথা ছিল।
এ বিষয়ে চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রুহুল আমীনের মুঠোফোনে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল কেটে দেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপারেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘বাজারের আশাপাশের রাস্তা ও ফুটপাতে বাজার বসার কারণে দ্বিতীয় তলাটি চালু করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা দ্বিতীয় তলা যেতে চাচ্ছে না এসবের কারণে। দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি কিন্তু তেমন একটা সুফল আসেনি। কারণ স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার কিছু সন্ত্রাসী অবৈধ বাজার বসানোর কাজে জড়িত। তবুও চেষ্টা করছি। যদি না হয় তাহলে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। এছাড়া তৃতীয় তলার কাজও শুরুর আশা রয়েছে।’