সুপ্রভাত ডেস্ক :
বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে তিনি গেয়েছেন ১৫ হাজারের বেশি গান। তার মধ্যে জনপ্রিয় গানের সংখ্যা যে কতো; তাও গুনে শেষ করা যাবে না। সিনেমার গানে তো তিনি অদ্বিতীয়। সেজন্যই তাকে বলা হয় বাংলা সিনেমার প্লেব্যাক স¤্রাট।
হ্যাঁ, তিনি এন্ড্রু কিশোর। মায়াবী-মধুর কণ্ঠে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন প্রতিটি বাঙালির মনে। কয়েক প্রজন্মকে মাতিয়ে গেছেন সুরের মুর্ছনায়। সেই এন্ড্রু কিশোরের চলে যাওয়ার দিন আজ। গেলো বছরের ৬ জুলাই শ্রোতাদের চোখের জলে ভিজিয়ে তিনি পাড়িয়ে জমিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। দেখতে দেখতে প্লেব্যাক স¤্রাটের চলে যাওয়ার এক বছর হয়ে গেলো। এন্ড্রু কিশোরের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর। আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে তার সংগীত চর্চার শুরু হয়। গানে অসামান্য প্রতিভা থাকায় তিনি অল্প সময়েই সংগীত সংশ্লিষ্টদের নজর কাড়তে সক্ষম হন।
সব ধরণের গানেই এন্ড্রু কিশোরের ছিল অসাধারণ দখল। তিনি নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, লোক, আধুনিক কিংবা দেশাত্মবোধক সব গানেই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তবে এন্ড্রু কিশোর অধিক স্মরণীয় এবং বরণীয় সিনেমার গানের জন্য। সেই প্ল্যেব্যাক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালের সিনেমা ‘মেইল ট্রেন’ দিয়ে। এতে আলম খানের সুরে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ শিরোনামে একটি গান গেয়েছিলেন তিনি। তবে এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয়তা আসে ১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রতীজ্ঞা’ সিনেমার গান দিয়ে। সেখানে তার কণ্ঠে ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি শ্রোতাদের মন জয় করে নেয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অবিরাম গান করে গেছেন তিনি।
এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় গানের তালিকা করাও ভীষণ কঠিন কাজ। তবুও কয়েকটি গানের নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন। যেমন- ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙের ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি বন্ধু আমার চিরসুখে থাকো’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘ও সাথী রে যেও না কখনো দূরে’, ‘কী যাদু করেছো বলো না’, ‘প্রতিদিন ভোর হয়’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘এতো প্রেম ছিল’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা’, ‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ’ ইত্যাদি। গান গেয়ে এন্ড্রু কিশোর আকাশছোঁয়া খ্যাতি পেয়েছেন। সেই সঙ্গে জিতেছেন বহু পুরস্কারও। শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার ও দুইবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।