সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। এবারের আসরেও ফেভারিট ধরা হচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু মূল লড়াইয়ে অন্যরকম এক দলের উপস্থিতি। বড্ড বিবর্ণ তাদের মাঠের পারফরম্যান্স। ইংল্যান্ড ম্যাচে ৫৫ রানে অলআউট হওয়ার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারলো না দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। হেসেখেলে ক্যারিবিয়ানদের হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। ৮ উইকেটের জয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবার হাসলো দক্ষিণ আফ্রিকা। বিপরীতে টানা দুই ম্যাচে হার কাইরন পোলার্ডদের।
আজ (মঙ্গলবার) দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ১৪৩ রান মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১০ বল আগেই টপকে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতে তেম্বা বাভুমা রান আউটের শিকার হয়ে ফিরলে যা একটু অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। পরের সময়টা শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার। এইডেন মারক্রামের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে রাসি ফন ডের ডুসেন ও রিজা হেনড্রিকসের চমৎকার ব্যাটিংয়ে এসেছে সহজ জয়।
পুঁজি ছিল অল্প, তাই বোলিংয়ে শুরুটা দারুণ প্রয়োজন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পেয়েও যায় আন্দ্রে রাসেলের মাপা থ্রোতে বাভুমা মাত্র ২ রান করে ফিরে গেলে। তবে প্রোটিয়াদের চাপে পড়তে দেননি হেনড্রিকস ও ফন ডের ডুসেন। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ার পথে হেনড্রিকস ৩০ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৩৯ রান করে ফেরেন আকিল হোসেনের বলে।
এরপর আর কোনও বিপদ নয়। ফন ডের ডুসেনের ঠাণ্ডার মাথার ব্যাটিং ও মারক্রামের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বড় জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মারক্রাম ২৬ বলে ২ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৫১ রানে, অন্যদিকে ফন ডের ডুসেন ৫১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ম্যাচ শেষ করেন অপরাজিত ৪৩ রানে।
এক একটা নাম শুনলেই গা শিউরে ওঠার কথা বোলারদের। ক্রিস গেইল, কিয়েরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল, এভিন লুইস, ডোয়াইন ব্রাভো… টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে যারা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তো এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের বোলারদের কীভাবে উড়িয়ে-গুঁড়িয়ে দেবেন, সেটি দেখার অধীর অপেক্ষায় ছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা! ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজর নষ্ট’ প্রবাদটা একেবারে মিলে যায় ক্যারিবিয়ানদের সঙ্গে।
গেইল-সিমন্সরা যেন ‘টেস্ট বিশ্বকাপ’ খেলছেন!
এত সব বড় নাম একসঙ্গে খেলায় দলে সমন্বয়ের মারাত্মক ঘাটতি। তাই ক্যারিবিয়ান ঝড় তো উঠছেই না, বরং মন্থর ব্যাটিংয়ে ডুবছে হতাশায় সমুদ্রে। গেইল আর টি-টোয়েন্টি সমার্থক হয়ে উঠেছে, অথচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেন ‘টেস্ট’ খেলছেন তিনি। লেন্ডল সিমন্সের অবস্থা তো আরও খারাপ। গেইল কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন তার ব্যাটিং দেখে। শুধু তারা নয়, দলের কোনও ব্যাটারই সুবিধা করতে পারছেন না। তাই ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অলআউট হয় ৫৫ রানে। আজ (মঙ্গলবার) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উন্নতি হয়েছে, তারপরও ৮ উইকেটে ১৪৩ রান ঠিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ-সুলভ স্কোর নয়।
যে দলে টি-টোয়েন্টির সেরা সব পারফর্মার, তাদের স্কোর দেড়শ পর্যন্ত না যাওয়া ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেই জুতসই নয়। তারপরও না হয় মানা গেলো, কিন্তু সিমন্স যা করছেন, সেটির কোনও ব্যাখ্যা হয় না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩৫ বলে ১৬ রান! কাগিসো রাবাদা বলে আউট হওয়ার আগে কোনও বাউন্ডারি নেই এই ওপেনারের। টেস্ট ব্যাটিং ছাড়া আর কি বলা যায়! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও প্রায় একই অবস্থা, ৭ বলে করে যান মাত্র ৩ রান।
গেইলের অবস্থাও তো সুবিধার নয়। নিজেকে হারিয়ে খুঁজে চলা এই ব্যাটার একটা ছক্কা মেরেছেন বটে, কিন্তু রান করেছেন ১২ বলে ১২। গেইল ১২ বলে খেলে দ্বিগুণ রান তুলবেন, ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশায় তো এটাই থাকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের চিত্রটাও একই, ১৩ বলে ১৩ রান।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিকোলাস পুরানের ৭ বলে ১২, রাসেলের ৪ বলে ৫, পোলার্ডের ২০ বলে ২৬ রানের ইনিংসগুলো তাদের নামের পাশে বেমানান। তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ১৪৩ পর্যন্ত গিয়েছে লুইসের হাফসেঞ্চুরিতে। সিমন্স যেখানে কঠিন সংগ্রাম করছিলেন, সেখানে উল্টো পাশে ৩৫ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায় ৫৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এই ওপেনার।
দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সফল বোলার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। এই পেসার ২ ওভারে ১৭ রান দিয়ে নেন ৩৩ উইকেট। ৪ ওভারে ২৪ রান খরচায় ২ উইকেট কেশব মহারাজের। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন কাগিসো রাবাদা ও আনরিখ নর্কিয়া।