হৃদরোগ চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে

পরিসংখ্যান ব্যুরো গত জানুয়ারিতে তাদের নিয়মিত প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ বা এসভিআরএস ২০২২ প্রকাশ করেছে। তাতে জন্ম, মৃত্যু, গড় আয়ু, মৃত্যুহার, শিক্ষা, বেকারত্ব-এই ধরনের বেশ কিছু বিষয়ে সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ের তথ্য আছে। সেখানে মৃত্যুর প্রধান ১৫টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকার শীর্ষে আছে হার্ট অ্যাটাক বা হঠাৎ হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু। তাদের মতে মোট মৃত্যুর ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশের কারণ হার্ট অ্যাটাক। অন্যদিকে তালিকার ৮ নম্বরে আছে নানা ধরনের হৃদ্রোগ। মোট মৃত্যুর ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের পেছনে আছে এই নানা ধরনের হৃদ্রোগ। তথ্য বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, হার্ট অ্যাটাক ও নানা ধরনের হৃদ্রোগে ২১ দশমিক ১২ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে। অর্থাৎ দেশে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটি হচ্ছে হৃদ্রোগে। এই পরিসংখ্যান একটি বিপজ্জনক বার্তা দিচ্ছে বলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও হৃদ্রোগবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
হৃদ্রোগে ২১ শতাংশ মৃত্যুর হিসাবে শিশুরাও আছে। মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে দেশে হৃদ্রোগে বহু মানুষ আক্রান্ত, জাতীয়ভাবে এই রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, হৃদ্রোগ একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। কিছু হৃদ্রোগের চিকিৎসা দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে হয়। কিছু হৃদ্রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল।
বহুদিন ধরে হৃদ্রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব গবেষণা বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী। বিবিএসের নতুন পরিসংখ্যান সম্পর্কে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বেশ আগে থেকেই বলে আসছি যে হৃদ্রোগ বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রবলভাবে জেঁকে বসেছে। এসভিআরএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান আমাদের আশঙ্কারই বাস্তব রূপ। তামাকের ব্যবহার, কায়িক পরিশ্রম কম করা, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, লবণ বেশি খাওয়া এবং বায়ুদূষণের কারণে দেশে হৃদ্রোগ বাড়ছে, হৃদ্রোগে মৃত্যু বাড়ছে। এখন সরকারকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক কোন বিষয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।’
এ প্রসঙ্গে আমরা হৃদরোগ চিকিৎসায় সীমাবদ্ধতার কথা তুলতে পারি। যেমন, এই রোগে এত মৃত্যু সত্ত্বেও চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকলেও এর বাইরে তেমন সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর হলেও এখানে হৃদরোগ চিকিৎসায় বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল নেই। এখানে একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতালের সীমিত শয্যার ওয়ার্ড। সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল হলেও সেখানে সামর্থের অভাবে বেশিরভাগ মানুষ যেতে পারে না।
চট্টগ্রামের মতো বৃহৎ নগরে যদি এই পরিস্থিতি হয় তাহলে মফস্বল এলাকায় কী পরিস্থিতি তা সহজে অনুমেয়। কাজেই আমরা মনে করি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলো দূর করার পাশাপাশি কম খরচে হৃদরোগ চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।